পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ర్సీ8 বিভূতি-রচনাবলী বলিলাম, কি কথা শুনি ? সরোজিনী অবিচলিত কণ্ঠে কহিল, আর একটা বাড়ী দেখ, এ বাড়ীতে আর একদণ্ডও থাকতে পারব না, মাইরি বলছি। কথাটি আমার হৃদয়ের অন্তস্তলে প্রবেশ করিল। বাড়ী-বদল সহজ ব্যাপার নয় কোন মতেই। পাঁচ বৎসর নির্বিঘ্নে অনড় অবস্থায় এইখানে রমাদের সন্নিকটে দুটি পরিবারের স্নেহবন্ধনে দিনযাপন করিতেছিলাম। আজ অকস্মাৎ সেই স্বগঠিত পরিপাটী নীড় ভাঙ্গিবার আদেশ হইল। দুৰ্ব্বাসার অভিশাপ বোধ হয় এ আদেশের সহিত তুলনীয় হয় না। বিচলিত চিত্তে কহিলাম, অপরাধ ? স্ত্রী তখন বিশদভাবে অপরাধ ব্যাখ্যা করিল। সে এক অভিনব অপরাধ। কেন জানি না, রমা কমলির ব্যবহৃত বিছানাগুলি সংগ্ৰহ করিয়া রাখিয়াছে। সেই বিছানার উপর গুইয়া কমলি নাকি নিশ্চিন্ত আরামে দেহত্যাগ করিয়াছিল। সরোজিনী তাহা স্বচক্ষে দেখিয়াছে । এমন কি ফটোতে পর্য্যন্ত তাহার ছবি উঠিয়াছে। রমা সেই বিছানাগুলি প্রতিদিন নাড়িয়াচাড়িয়া কারণে অকারণে কাদিতে থাকে। সেগুলিকে সযত্নে পবিত্রভাবে বাক্সের মধ্যে তুলিয়া রাখিয়াছে। স্ত্রী কহিল, সত্যি বাপু, ও আমি কখনও সহ করতে পারব না। ছিষ্টি রি-রি কচ্ছে। একটু বাছ-বিচার নেই। আমার ঠাকুর রয়েছে, দেবতা রয়েছে। তোমার দুটি পায়ে পড়ি, আজই তুমি বাড়ী ঠিক করে এস । কথাটি শুনিতে যা বলিতে খুব সহজ । কহিলাম, রমারা কি মনে করবে সরো ? সরোজিনী বলিল, তাই বলে তো আমি ইহপরকাল খোয়াতে পারি না। জেনেশুনে পাপ করি কি করে বল | বলিলাম, কমলিকে তুমি না রমার চেয়ে বেশী ভালবাস ? আড়াই টাকা দিয়ে তো ফটো তুললে । সরোজিনী কাদিয়া ফেলিল, বলিল, ওগো, দোহাই তোমার, আর দ্বন্ধে মেরো না । এই নাও কমলির ফটো। বেঁচে থাকতে তো একদিনও বাছাকে আমার একটুও ভালবাস নি। মরে গিয়েও তার রেহাই নেই। কথার শেষে সে কমলির ফটোখানি নিয়া ছুড়িয়া ফেলিয়া দিল। বাতাসে ভর করিয়া সেই ফটাে দূরে উড়িয়া গেল। অগত্য আমায় সে বাড়ী অচিরেই ত্যাগ করিতে হইল। রমাদের সহিত সকল সম্বন্ধ ছিন্ন হইল । জানিয়া শুনিয়া তো আর পাপ করিতে পারি না । আচার-বিচার আগে, না আগে ভালবাসা । আশ্চৰ্য্য মানুষ ।