পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8s 8 বিভূতি-রচনাবলী সেই রাজি হলেনী—ওয়ই পাদপদ্মে তোমার দাদ। সব টাকা ঘুচিয়েচে । একটু পরে দাদা ও পাচুমামা বাড়ী ফিরল। আমাদের দেখে দুজনেই প্রথমটা অবাক হয়ে যেন থতমত খেয়ে গেল, তারপর দাদা জিগ্যেস করলে—কিরে নগা, কি মনে করে ? নারাণবাৰু বল্পেন—ও এসেছে তোমায় বাড়ী নিয়ে যেতে। তোমার ঠাকুরমার বড় অস্থখ যে ! —অমুখ ? কি অসুখ ? দাদা আমার মুখের দিকে চাইলে। দাদার হঠাৎ-ভয়-পাওয়া হঠাৎ-মান মুখের দিকে চাইতে পারলুম না। বড় কষ্ট হলো, একবার মনে হলো, সত্য কথাটা বলে ফেলি। কিন্তু তা হলে দাদা যদি বাড়ী না যায় ? সেই রাত্রেই দাদাকে নিয়ে বাড়ী ফিরলাম । বাড়ী এসে দাদা খুব বকুনি খেলে ঠাকুরমা ও মায়ের কাছে । তার উত্তরে সে নারাণবাবুকে গালমন্দ দিয়ে স্ব-তা বলে গেল। কে বলেছে সে সর্ষে কেনে নি ? এখনও বিশ মণ সর্ষে ঘরে, মজুত রয়েছে—আর সব মাল চাবাদের ঘরে রেখে দেওয়া হয়েছে, দরকার হলেই,—রাজি দুলেনী কে ? রাজি দুলেনীকে দাদা চেনেও না । নারাণবাবুর মত কুটিল, ধড়িবাজ লোক জুনিয়ায় আর নেই। তিনি টাকা ধার চেয়েছিলেন, দাদা দেয়নি, তাই তিনি দাদার বিরুদ্ধে এই সব মিথ্যে রটনা করে বেড়াচ্ছেন । বলা বাহুল্য, মা বা ঠাকুরমা দাদার এসব কথা কিছু বিশ্বাস করলেন না । মাস খানেক পরে পাচুমাম আবার একদিন এসে হাজির আমাদের বাড়ীতে। ঠাকুরমা বল্পেন—পেচে শোন। হতভাগা, আমার ষে এক রাশ টাকা চেয়ে পাঠালি পটলাকে দিয়ে ব্যবসা করবি বলে, কই ব্যবসার হিসেব দেখা তো আমায় ? দেখি কোথায় গেল এতগুলো টাকা ! পাচুমামার মুখ চিরদিন তুবড়ি ছোটে । হাত পা নেড়ে সে বুঝিয়ে দিলে, টাকা ডোবানো তো দূরের কথা—আর মাস দুই পরে ঐ চারশো টাকায় অন্ততঃ দেড়শোটি টাকা লাভ দাড়াবে। তখন লাভে মূলে একসঙ্গে টাকাটা এনে দেবে এখন। পাচুর অদৃষ্ট খারাপ, সে ধার জন্ত চুরি করে—সেই নাকি পাচুকে চোর বলে। বাকু, তার জন্যে সে দুঃখিত নয়— আসল টাকাটা কোন রকমে ঠাকুরমায়ের হাতে তুলে দিতে পারলেই সে স্বস্তিৱ নিঃশ্বাস ফেলে বঁাচে । ততদিন পৰ্য্যস্ত রাত্রে ঘুম নেই তার । পাচুমামার বক্তৃতায় ঠাকুরমার বিশ্বাস ফিরে এল। ফলে পাচুমাম আমাদের বাড়ীতে রয়েই গেল। দাদাকে এর আগেই সে নষ্ট করেছিল, এবার আমার পিছনে লাগল এবং অদ্ভুতভাবে সাফল্য অজর্ন করল। এমন কি, কিছুদিন পরে আমারই মনে হলে, আমি দাদাকে বুঝি ছাড়িয়েই যাই । তখন আমার বিবাহ হয়নি—দাদার সবে হয়েছে। আমি নানা ছুতোয় ঠাকুমার কাছ থেকে টাকা আদায় করি আর পাঁচুমামার পরামর্শ মত খরচ করি। মহকুমা শহর ছিল নিকটেই । নানা ছতোনাতায় মহকুমা গিয়ে আমি আর পাঁচুমামা প্রায়ই রাত্রে বাষ্ট্র ফিরভূম না।