পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२२ বিভূতি-রচনাবলী নীরদ বলিল—শুয়ে পড় এখন । ভেবে আর কি হবে। যা হবার হবে । নীরদার এ কথাটা আবার শান্তিরামের বেশ লাগিল। নীরদার মনে ভালবাসা আছে । দুঃখ হোক, কষ্ট হোক, নীরদার মুখখান দেখিলে তবুও যেন অনেকটা শাস্তি । নীরদ বলিল –ওগো শোন, তোমাদের গায়ে পশুপতি মুখুজে কে ছিল ? পুকুরের ওই ষে বড দোতলা বাড়ীটা ? ও তো আমার বিয়ে হয়ে পৰ্য্যস্ত পড়েই আছে ওই ভাবে । ওই বাড়ীর লোক এসেছে, আজ পুকুরের ঘাটে গিয়ে দেখি গাড়ী করে নামলো । একজন ছোকরা, এক বোল-সতেরো বছরের মেয়ে, এক বুড়ী বোধ হয় ওদের মা—-মেয়েটা আইবুড়ে', বেশ দেখতে । ওরা পশ্চিমে থাকতো না ? শাস্তিরাম বলিল—পশুপতিদাদার বাড়ীতে ? তা হবে । পশুপতিদাদা তো মারা গিয়েছেন আজ সাত-আট বছর। তার ছেলে শুনেছি ইঞ্জিনিয়ার। এতকাল পরে দেশের কথা মনে পড়েছে বোধ হয়। লখনে ন কানপুর কোথায় থাকে । —কোন জন্মে তো আসতে দেখিনি। বাড়ীটা তো ভাঙাচোর, থাকবে কি করে ও বাড়ীতে ? পরদিন সকালে শাস্তিরাম বাহিরের ঘরে বসিয়া আছে, এমন সময় পচিশ-ছাব্বিশ বছরের একটি স্বদর্শন যুবক আসিয়া তাহাকে প্রণাম করিয়া বলিল—কাকা চিনতে পারেন ? শাস্তিরাম বুঝিল এটি পশুপতি মুখুজের ছেলে, যাহার কথা রাত্রে হইয়াছিল। বলিল— এসো বাবা, এসো। তোমার খুড়ীমা বলছিলেন তোমরা কাল এসেছ । তোমার বাবার সঙ্গে আমার যথেষ্টই—আহা পুণ্যাত্মা লোক— তোমাদের রেখে স্বর্গে চলে গিয়েছেন- বসে বাব, বসে। বৌদিও এসেছেন নাকি ? * না, মায়ের শরীর ভাল না । সঙ্গে এসেছেন আমার এক সম্পর্কে মাসীমা । আমি কখনো গায়ে আসিনি—কাউকে চিনি নে । সকলের সঙ্গে আলাপ করে বেড়াচ্ছি। দেখুন, এই বাপঠাকুরদার দেশ। অথচ কাউকে চিনি নে। বাড়ীটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে একেবারে । কাল সারা রাত্তির বিছানায় জল পড়েছে। সঙ্গে আমার বোন আছে—ওকেও নিয়ে এলাম, এবার ম্যাট্রিক দেবে। কলকাতায় মামার বাড়ী থেকে পড়ে। —বেশ বেশ, খুব ভালো বাবা । যাবে আসবে বৈ কি ! তোমরা গায়ের রত্ন, না এলেগেলে কি হয় ? দেখছ তো গায়ের অবস্থা। এমন সোনার চাদ ছেলে সব থাকতে, আমরা কি কষ্টট পাচ্ছি দেখ গায়ে থেকে । তোমার নামটি কি বাবা ? যুবক বলিল—আজ্ঞে আমার নাম স্থশাস্ত । আমার বোনের নাম চিন্ময়ী, চিন্থ বলে ডাকে । আপনার কাছে যে জন্তে এলাম তা বলি। বাবা আমাদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন, ঠাকুরদাদার নামে গায়ে একটা পুকুর কেটে প্রতিষ্ঠা করবার জন্তে। আজ সাত বছর বাবা মারা গিয়াছেন, কিন্তু নানা কারণে আমার গায়ে আসা ঘটেনি। তাই এবার ভাবলুম—ষাবই। কাজটা সেরে আসি। আমাদের বাড়ীর সামনে ষে পুকুরটা রয়েছে, ও তো একেবারে মজা । ভাবছি ওটাকে কাটাবো। পাড়ার লোকের জল খাওয়ার স্ববিধে হয়