পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী ৪২৯ তোমার ছেলে ? বয়েস কত ? কলকাতা ছেড়ে যাবার আগে আমি নিজের খরচে দু’তিনখানা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে গেলাম। বাবা ননী, ফিরে এস, তোমার মা মৃত্যুশয্যায়, যদি শেষ দেখা করতে চাও— ইত্যাদি । এর ফলাফলের কথা আমি কিছু জানিনে—কারণ তিনচার দিনের মধ্যেই আমি আবার কলকাতা থেকে চলে গেলাম । পুনরায় কলকাতায় ফিরলুম দু-বছর পরে। কলকাতায় এবার এসেছিলাম খুব অল্পদিনের জন্তে, আগের সেই মেসটাতেই উঠেছিলাম— কিন্তু ফিরিওয়ালাকে এবার আর দেখলাম না সেখানে, তার কথা যে খুব মনে ছিল, তাও নয় । নিজের কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরতাম, অন্ত কারও কথা ভাববার অবকাশ ছিল কোথায় ? - হয়তো বা ওকে দেখলে সব কথা মনে পড়ত, কিন্তু তা হয় নি । তারপর আবার চলে গেলুম কলকাতা থেকে । বিদেশে থাকবার সময়ে অবসর-সময়ে আমার মাঝে মাঝে দু-একবার ফিরিওয়ালা ও তার ছেলের কথা মনে হত--তারপরে একেবারে ভুলে গেলাম । ন-বছর পরে বিদেশে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে এসে কলকাতাতেই চাকুরির খোজে এলাম, মাস কয়েক পরে একটা চাকুরি পেয়েও গেলাম । মেসেই থাকি। পূৰ্ব্বে ষে অঞ্চলে থাকতাম, সেই অঞ্চলে বটে, তবে অস্ত ৰাড়ীতে । হঠাৎ একদিন দেখি সেই ফিরিওয়ালা । সেই চেপষ্ট ধরনের হাড়িতে ক্ষীরমোহন ভরা, আগেকার মতই। ওকে দেখে কি জানি কেন, আমি হঠাৎ বড় খুশী হয়ে উঠলুম। এই যে মেসে এসে উঠেছি এখানে সবাই অপরিচিত, এদের সঙ্গে আমার মনের কোন যোগই নেই কোন দিক fদয়ে। এই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ভিড়ের মধ্যে এই লোকটিই একমাত্র আমার বহুদিনের পরিচিত —আমার বহুকাল পূর্বের ছাত্রজীবনের সঙ্গে কেবল এই লোকটিরই যোগ আছে—আর কারও নেই এখানকার মধ্যে । আমাকে কিন্তু ও প্রথমটাতে আদেী চিনতে পারেনি। আমার চেহারার অনেক পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছিল এর মধ্যে, বয়েসেও হয়েছিল, হবায়ই কথা—আমার বর্তমান জীবন ও ছাত্রজীবনের মধ্যে কুড়ি-একুশ বৎসরের ব্যবধান । এখনও লোকটা ঠিক সেই আগের দিনের মতই সেই একই ধরনের চেপটা হাড়ি মাথায় করে মেসে মেসে ক্ষীরমোহন ফিরি করে বেড়ায় । ওকে ডাকলুম। ক্ষীরমোহন কিনে পয়সা দেবার সময় ও আমার মুখের দিকে চেয়ে দেখলে দু-একবার, কিন্তু কিছু বলতে সাহস করলে না । আমি বল্লুম—কি, চিনতে পারো ?