পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়া 88లి ফিরাইল। ব্যাপার কি ? আমার কথার মধ্যে হাসিবার কি আছে ভাৰিয়া পাইলাম না। ললিতৰাবু বলিলেন—মণিয়া, যাও, আর একটু চা দাও আমাদের— মণিয়া চলিয়া গেলে ললিতবাবু আমার দিকে ফিরিয়া বলিলেন—কে কার কাজ করে মশাই ? মণিয়াকে আপনি ভাল করে কোনদিন জানেন না। এই ফুলবাড়ী ওর নিজের । অামি ওর আশ্রয়ে অাছি । এটা ওর বাপের বাড়ী । মণিয়াকে ললিতবাবুর কি বলিয়াই জানিতাম, কখনওঁ আমার মনে আসে নাই ৰে, সে ছদ্মবেশিনী রাজকুমারী, স্বতরাং কথাটা শুনিয়া তো দস্তুরমত আশ্চর্ষ্য হইলাম। বলিলাম— মুঙ্গেরে যখন থাকতেন আপনি, তখন মণিয়া তো আপনার বাসায় কাজ করত— ললিতবাবু হাসিয়া বলিলেন– কখনও আমার বাসায় কাজ করতে ওকে দেখেছিলেন ? আন্দাজ করেছিলেন আপনাকে ডেকে আনত বলে। আসল কথা জানতেন না । —আসল কথাটা কি তাড়াতাড়ি বলুন, রহস্যটা কোথায় ? —মণিয়ার বাবার সঙ্গে ওর মায়ের বিয়ে হয় নি । ওর বাবা মস্ত ধনী জমিদার ছিলেন, ওর মা মজঃফরপুর জেলার এক ব্রাহ্মণ গৃহস্থের মেয়ে—এই বাগানবাড়ীতে এনে ওর বাবা তাকে তার কাছে রাখেন । মণিয়া ওদের একমাত্র সস্তান—এখন দুজনেই পরলোকগত, মণিয়া এই বাগানবাড়ীর মালিক। বুঝলেন কিছু ? খুব সোজা কথা । —খুব সোজা কথা নয়। মণিয়ার সঙ্গে আপনার কি ভাবে আলাপ, আপনিই বা এখানে থাকেন কেন, মণিয়ার অভিভাবকই বা কে ছিল—এসব কথা খুব সোজা আর कहे ? ললিতবাবু বলিলেন—সে আরও সোজা কথা। আমি মশিয়ার বাবার প্রাইভেট সেক্রেটারী ছিলাম, তার মৃত্যুর পরে আমিই এখন মণিয়ার অভিভাবক। আর একজন জছি আছেন মুঙ্গেরের উকিল বাৰু কমলেশ্বরী সহায় । মধ্যে আমাকে ওরা সবাই ষড়যন্ত্র করে তাড়িয়ে দিয়েছিল, তাই মুঙ্গেরে গিয়ে বছরখানেক ছিলুম। মণিয়া প্রায়ই আমার সঙ্গে দেখা করতে যেত। আপনার কাছে ওকে পাঠাতুম বইয়ের দরুন টাকা আনতে। ও নিজেও অনেক সাহায্য করেছে— বলিলাম—ওর বিয়ে হয়নি ? ললিতবাবু চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন—ওর এই ইতিহাস শুনে কে ওকে বিয়ে করবে বলুন । বিশেষত, এ দেশ তো জানেন ? ইতিমধ্যে সূৰ্য্য পশ্চিমে ঢলিয়া পড়িল, বেলা আর বেশী নাই, চামেলি বনের ধারে পাথরের বেঞ্চিতে বসিয়া আমাদের গল্প জমিয়া উঠিয়াছে, এমন সময় মণিয়া আবার চা আনিল । ললিতবাবু বলিলেন—মশিয়া, এ বাবুকে চিনতে পেরেছ ? মণিয়া হাসিয়া ঘাড় নাড়িল । — কোথায় দেখেছিলে বল তো ? —মূঙ্গেরে । ওর বাসায় ।