পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 বিভূতি-রচনাবলী পরে আমার দিকে চাহিয়া হাসিমূখে ওর অভ্যস্ত দেহাতি হিন্দীতে বলিল—তাল আছেন शांबूछौ ? —ই । তুমি ভাল আছ মণিয়া ? এই সময় ললিতবাবু বলিলেন–রাত্রে কিন্তু থাকতে হবে আপনাকে । আমি স্থটো কথা বলবার লোক পাইনে, এসেছেন যদি থাকুন। মণিয়া তুমিও থাকতে বল । @ —আমিও তো বলছি, থাকুন বাবুজী। ভারী খুশী হব থাকলে । অগত্য রাজী হইতে হইল । দেখিলাম মণিয়া সত্যই খুশী হইল। বলিঙ্গ—রাত্রে আপনি কি খান বাবুজী ? উনি পুরি খান—আপনিও তাই খাবেন তো ? ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিলাম, মণিয়া সত্যই স্বন্দরী মেয়ে । হিন্দুস্থানী মেয়ের দেহের গড়ন ও বাঙ্গালী মেয়ের মুখের লাবণা, এ দুটির অপূৰ্ব্ব সমাবেশ হইয়াছে মণিয়াতে ৷ দেহবর্ণ চম্পক গেীর, কাশ্বিরী মেয়ের মত ঈষৎ গোলাপী। মাথায় ঘন কালো এক ঢাল চুল। বড় বড় চোখ। আমার আশ্বাস পাইয়া মণিয়া উৎসাহের সহিত বাড়ীর ভিতরে চলিয়া গেল— সম্ভবতঃ রান্নাবামা করিতে গেল । ললিতবাবু বলিলেন—বডড সেবাযত্ন করে আমাকে—মানে খুব । তা মানবে না ? আমাদের সঙ্গে ওদের কথা ? কত কান্নাকাটি করে আমায় আনল। রাত্রে চমৎকার চাদ উঠিল । জ্যোৎস্নার আলো বেণীগীর ফুলবাড়ীর প্রাচীন বট, মেহfল্প ও পাইন গাছের ডালে পড়িয়া সমস্ত উদ্যানটিকে যেন এক রহস্যময় পুরানো দিনের জগতে পরিণত করিল। আমার মনে পড়িল ছুটি প্রেমিক-প্রেমিকার কথা—মণিয়ার বাবা ও মা— তারা সমাজ সংসারকে তুচ্ছ করিয়া এই নিভৃত নিরালা বাগানে পরম্পরের প্রণয়কে মাত্র সম্বল করিয়া জীবনের দিনগুলি কাটাইয়া গিয়াছেন । মণিয়া আমাদের ভাকিয়া লইয়া গেল খাইবার জন্ত । তখন রাত দশটার কম নয় । এই এত বড় বাড়ীর নিভৃত রান্নাঘরটিতে বসিয়া মেয়েটি এতগুলি রান্না রাধিয়াছে, এক চুপড়ি আটার পুরী ভাজিয়াছে—আগুনের তাতে স্বন্দর মুখখানি রাঙা, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম—দীর্ঘ কালে কেশপাশ অবিন্যস্ত—দেখিয় তাহার উপর কেমন মমতা হইল । মণিয়া কাছে বসিয়া আমাদের ধত্ব করিয়া খাওয়াইল, নিজের হাতে ললিতবাবুকে তামাক সাজিয়া দিয়া গেল, মশলা স্বপারী দিয়া গেল—হিন্দুস্থানীর দেশে পান খাওয়ার তেমন রেওয়াজ নাই । ললিতবাবুর উপর হিংস হইল—লোকটা তোফা তোয়াজে আছে । মণিয়ার মত মেয়ের সেবা যে দিনরাত পায়, তাহার উপর হিংসা হয় বৈকি। লোকটার বরাত ভাল। এইভাবে ললিতবাবুর সঙ্গে যে আলাপ-পরিচয়ের স্বত্র পুনরায় স্থাপিত হইল, আমার এক বৎসরব্যাপী মুঙ্গের প্রবাসের মধ্যে সেই স্বত্র ধরিয়া অনেকদিন বেণীগীয় ফুলবাড়ীতে গিয়াছি। বার দুই ৰাইবার পরে আমার কৌতুহল বড় বাড়িল। হয়তো আমার সে কৌতুহল