পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীীর ফুলবাড়ী 880. অম্বথা ধরনের, তবুও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। কৌতুহল শুধু এই বিষয়ে যে, মণিয়া ও ললিতবাবুর মধ্যে সম্পর্কটি কি ] ললিতবাবুর বয়স বাহান্ন হইতে পারে, সাতায় হইতে পারে, যাট বলিলেও দোষ ধরিতে পারা যায় না । মণিয়ার বয়স খুব বেশী হইলেও চব্বিশের বেশী কখনও নয়। পিতা-পুত্রীর সম্পর্ক। ছাত্রী-শিক্ষকের সম্পর্ক। অভাবপক্ষে ভাই বোনের সম্পর্ক ! বয়স হিসাবে তাই হওয়া উচিত এবং হইলে দেখাইত খুব ভাল মানিয়া লইতাম। কিন্তু জগতে যাহা ভাল দেখায়, যাহা হওয়া উচিত, তাহা সব সময় ঘটে না ইহাই দুঃখ । একদিনের কথা বলি, কি করিয়া প্রথম আমার সন্দেহ হইল । সেদিন ভয়ানক গরম, দারুন রোদের তাত, বেলা তিনটার সময় আমি গিয়াছি ওখানে, গিয়া দেখি মণিয়া ছাড়া আর কেহ নাই বাড়ীতে । সে আমায় দেখিয়া প্রায় কাদ-কাদ হইয়া বলিল—বাবুজী, উনি কোথায় বেরিয়ে গিয়েছেন ছুপুরের পরে, এক ঘণ্টার মধ্যে ফিরবার কথা—এখনও ফিরলেন না, কি হবে ? জিজ্ঞাসা করিয়া শুনিলাম, ললিতবাবু বালিশের জন্ত শিমূল তুলা কিনিতে গিয়াছেন নিকটবৰ্ত্তাঁ কি একটা বস্তিতে। আমি যত মণিয়াকে বোঝাই, তাহার সে কি ব্যাকুলত, কি উদ্বেগ, বার বার ঘরবাহির করার সে কি চঞ্চল ভঙ্গী! আমি সেদিন মণিয়াকে নতুন দৃষ্টি দিয়া দেখিলাম যেন। সেই একদিন দেখিয়াই আমি স্পষ্ট বুঝিয়াfছলাম, মণিয়া ললিতবাবুকে ভালবাসে। পিতাপুত্র নয়, ভাইবোন নয়। নায়িকার মত ভাল না বাসিলে ঠিক সে জিনিসটি হয় না—চোখে না দেখিলে কি করিয়া তাহা বুঝাইব । তাহার পর ললিতবাবু একদিন আমাকে সামান্ত একটু বলিলেন । কথায় কথায় মণিয়ার কথা উঠিলে আমায়ু বলিলেন— ও আমার মুখের দিকে চেয়ে ওর যৌবনের দিনগুলো কাটাল— কতবার ভাবি, আমার অবর্তমানে ওর কি যে হবে । সমাজে ওর স্থান কোনদিনই নেই । আমায় ছাড়া ও কাউকে জানেও না । ভেবে কষ্ট হয় এক এক সময় | একটি কুড়ি-একুশ বছরের তরুণী যে একজন পঞ্চান্ন বছরের ( কম পক্ষে ) বৃদ্ধকে নিবিড়ভাবে ভালবাসিতে পারে, নিজের চক্ষে দেখার পূবে সে কথা কেহ যদি বলিত, তাহার কথা হাসিয়া উড়াইয়া দিতাম । জীবনের কি রহস্তই বা আমরা জানি ! মণিয়ার ভালবাসা দেখিয়া জীবনের একটি অজ্ঞাত তথ্য জানিয়া বিস্মিত হইলাম । আরও একটি ব্যাপার দেখিলাম । ললিতবাবু সম্পূর্ণ বেকার, একটি কানাকাড় দিয়াও তিনি মণিয়াকে সাহায্য করিতে অক্ষম, অথচ তাহার যাহা কিছু খরচ সব যোগাইতে হয় মণিয়াকেই এবং সে অমান বদনে তাহা এযাবৎ সরবরাহ করিয়া আসিতেছে। ললিতবাবু তাহার স্বগ্রামস্থ এক বেকার ভ্রাতু-পুত্রকে মাসিক অর্থসাহায্য করেন ( চার পাঁচ বার ললিতবাবু আমাকেই টাকাটা দিয়fছিলেন মনিঅৰ্ডার করিবার জন্য, কারণ র্তাহীদের এখানে নিকটে ডাকঘর নাই ), তাহাও মণিয়ার পয়সায় । ললিতবাবু ৰখন একা মুঙ্গেরের বাসায় থাকিতেন, তখনকার অপেক্ষ এখন তাহার চাল অনেক