পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী 88ፃ মণিয়ার পরনে একখান হালকা টাপা রঙের শাড়ী, গায়ে হিন্দুস্থানী মেয়েদের মত কোর্তা, স্বগঠিত গৌরবর্ণ বাছ দুটিতে বাজু, কানে বড় বড় কানবালা, কপালে কালে টিপ। রূপকথার রাজকুমারীর মত সম্পূর্ণ সেকেলে ধরনের বেশভূষা ওর, হালফ্যাশানের বড় একটা ধার ধারে না, দেহাতি মেয়ে, সম্ভবতঃ জানেও না। বলিলাম, বলে মণিয়া— —না বাবুজী, দাড়িয়ে আছি বেশ, সারাদিন তো বসে থাকি— —তুমি আপন মনে বেড়াও এ সময়টা, না ? —ই্যা বাবুজী, উনি ঘুমোন, আমার কাজকৰ্ম্ম থাকে না—একটু বেড়িয়ে বেড়াই— —ঘুমোও না বুঝি ? —না, দুপুরে আমার ঘুম ভাল লাগে না। অভ্যেস নেই বাবুজী । —আচ্ছ, এ বাগানে কতদিন আছ ? —ছেলেবেলা থেকেই। এই তো আমাদের বাড়ীম্বর। বাবা মা ছিলেন যখন, তখন খুব ভাল ছিল—বাবার বাগানের শখ ছিল খুব । নিজের হাতে গাছ পুতেছিলেন কত। একটা বটগাছ আছে বাবার হাতে পোত, তার পাতাগুলো জুড়ে ঠোঙার মত হয়ে যায়— নাকি কৃষ্ণজী দুধ খেতেন বলে বৃন্দাবনে যমুনার ধারে অমনি হত, বংশীবট বলে এদেশে । অম্বিন দেখবেন । আমাকে সে পুকুরের ওপারে বাগানের দক্ষিণ কোণে লইয়া গেল । বনের মধ্যে একটা ছোট বটগাছ, তাহার কচি পাতা পরম্পর জোড়া লাগিয়া ঠিক যেন ঠোঙার মত। মণিয় আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া বলিল, দেখলেন ? কি তাঞ্জব বাবুজী ? না । বিস্মিত হইবার মত মুখ করিয়া বলিলাম, তাজ্জবই বটে, সত্যি— মণিয়া হাত নাড়িয়া উৎসাহের সহিত বলিতে লাগিল—দেখুন কতকাল আগে কৃষ্ণজী দুধ খেতেন বলে এখনও পাতাগুলো ওর জোড়া লেগে যায়। এতেও লোকের অবিশ্বাস ঘোচে ন!—বলুন বাবুজী ! বিজ্ঞের মত ঘাড় নাড়িয়া বলিলাম—ঠিক বলেছ মণিয়া—খুব ঠিক— উহার সরল বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করিবার আমি কে ? জিজ্ঞাসা করিলাম—তোমার বাবা কতদিন মারা গিয়েছেন ? —ছ বছর বাবুজী । —উনি মারা যাওয়ার পর কোথায় ছিলে ? —কোথাও না বাবুজী, এখানেই । আমার দাই-মা আর চাচেরা ভাই সঙ্গে থাকত। –তা ওরা এখন কোথায় ? —উনি জালাতে চলে গিয়েছে। কি করি বাবু, মুঙ্গেরে বড় কষ্ট পেতেন উনি, বাবা এমন কিছু রেখে যান নি ষে সেখানকার সব খরচ দিই। তবে এখানে থাকলে চলে যায় এক রকমে। ওঁর কষ্ট চোখে দেখে থাকতে পারলাম না, তাই নিয়ে এলাম।