পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল ›¢oል অবশ্ব তখন কিছু করিবার উপায় ছিল না । সে আদালতের বেলিফকে জিজ্ঞাসা করিল —কি করলে এদের হোটেল আবার বজায় থাকে ? —টাকা চুকিয়ে দিলে । এ অতি সোজা কথা মশাই। সাড়ে সাতশো টাকার দাবীতে নালিশ–এখনও ডিক্ৰী হয় নি। বিচারের আগে সম্পত্তি সীল না করলে দেনাদার ইতিমধ্যে মাল হস্তান্তর করতে পারে, তাই সীল করা । আদালতের পেয়াদার কাজ শেষ করিয়া চলিয়া গেল। বেচু চক্কত্তিকে একধারে ডাকিয়া হাজারি বলিল—আমার সঙ্গে চলুন না কৰ্ত্ত মশায় একবার ইষ্টিশনের দিকে—আসুন, কথা আছে । রেলের হোটেলে নিজের ঘরটিতে বেচু চক্কত্তিকে বসাইয়া হাজারি বলিল—কর্তা একটু চা থাবেন ? বেচু চক'ত্তর মন খারাপ খুবই । চা খাইতে প্রথমটা চাহে নাই, হাজারি কিছুতেই ছাড়িল না। চা পান ও জলযোগাস্তে বেচু বলিল—হাজারি, তুমি তো সাত-আট বছর আমার সঙ্গে ছিলে, জানো তো সবই, হোটেলট ছিল আমার প্রাণ । আজি বাইশ বছর হোটেল চালাচ্ছি —এখন কোথায় যাই আর কি করি । পৈতৃক জোতজুমা ঘরদোর যা ছিল ফুলে-নব লায়, সে এখন আর কিছু নেই, ওই হোটেলই ছিল বাড়ী । এমন কষ্ট হয়েছে, এই বুড়ো বয়সে এখন দাড়াই কোথায় ? চালাই কী করে ? —এমন অবস্থা হোল কি করে কর্তা ? দেনা বাধালেন কী করে ? —খরচে আয়ে এদানীং কুলোতো না হাজারি । স্থ-বার বাসন চুরি হয়ে গেল । ছোট হোটেল, আর কত ধাক্কা সইবার জান ছিল ওর । কাবু হয়ে পড়লো। খদের কমে গেল । বাড়ীভাড়া জমতে লাগলো—এসব নানা উৎপাত— হাজারি বেচু চৰুক্তিকে তামাক সাজিয়া দিয়া বলিল—কৰ্ত্ত, একটা কথা আছে বলি। আপনি আমার পুরনো মনিব, আমার যদি টাকা এখন থাকতো, আপনার হোটেলের শীল আমি খুলিয়ে দিতাম। কিন্তু কাল মেয়ের বিয়ে দিয়ে এখন অত টাকা আমার হাতে নেই। তাই বলছি, যতদিন বন্ধে থেকে না ফিরি, আপনি আমার বাজারের হোটেলের ম্যানেজার হয়ে হোটেল চালান। পচিশ টাকা করে আপনার খরচ দেবো । (হাজারি মাহিনীর কথাটা মনিবকে বলিতে পারিল না । ) খাবেন দাবেন হোটেলে, আর পদ্মদিদিও ওখানে থাকবে, মাইনে পাবে, খাবে। কি বলেন আপনি ? বেচু চৰুত্তির পক্ষে ইহা অস্বপনের স্বপন ! এ আশা সে কখনো করে নাই। রেলবাজারের অত বড় কারবারী হোটেলের সে ম্যানেজার হইবে । পদ্মঝিও খবরটা পাইয়াছিল বোধ হয় বেচুর কাছেই, সেদিন সন্ধ্যাবেলা সে কুমমের বাড়ী গেল। কুস্কম উহাকে দেখিয়া কিছু আশ্চৰ্য্য না হইয়া পারিল না, কারণ জীবনে কোনোদিন পদ্মঝি কুস্কমের দোর মাড়ায় নাই । —এসো পদ্মপিসি বসে। আমার কি ভাগ্যি । এই পিড়িখানতে বোসে পিসি ৷ পানদোক্তা খাও ? ৰলো পিসি, সেজে জানি—