পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী موا কর্তার মত তাকিয়া ঠেস্ দিয়া বসিয়া টিকিট বিক্রয় করিবে। রাধুনী-বামুন ও ঝি “বাবু’ ৰলিয়া ডাকিবে । সে নিজে বাজারে গিয়া মাছ তরকারী কিনিয়া আনিবে, এ হোটেলের মত ৰিয়ের উপর সব ভার ফেলিয়া দিয়া রাখিবে না। খদেরদের ভাল জিনিস খাওয়াইয়া খুশী করিয়া পয়সা লইবে । সে এই কয় বছরে বুঝিয়া দেখিল, লোকে ভাল জিনিস, ভাল রান্না খাইতে পাইলে দু-পয়সা বেশী রেট দিতেও আপত্তি করে না। এ হোটেলের মত জুয়াচুরি সে করিবে না, মুহরি ডালের সঙ্গে কম দামের খেসারি ডাল চালাইবে না, বাজারের কানা পোকাধরা বেগুন, রেল-চালানি বরফ-দেওয়া সস্তা মাছ বাছিয়া ৰাছিয়া হোটেলের জন্ত কিনিবে না । এখানে খদ্দেরদের বিশ্রামের বন্দোবস্ত নাই—যাহারা নিতান্ত বিশ্রাম করিতে চায়, কৰ্ত্তার গদিতে বসিয়া এক-আধটা বিড়ি থায়—কিন্তু তাহার মনে হয় বিশ্রামের ভাল ব্যবস্থা থাকিলে সে হোটেলে লোক বেশী আসিবে—অনেকেই খাওয়ার পরে একটু গড়াইয়া লইতে চায়, সে তাহার হোটেলে একটা আলাদা ঘর রাখিবে খুচরা খন্ধেরদের বিশ্রামের জন্য। সেখানে ভক্তপোশের ওপর শতরঞ্চি ও চাদর পাতা থাকিবে, বালিশ থাকিবে, তামাক খাইবার বন্দোবস্ত থাকিবে, কেউ একটু ঘুমাইয়া লইতে চাহিলেও অনায়াসে পরিবে। খাও-দাও, বিশ্রাম কর, তামাক খাও, চলিয়া যাও । রাণাঘাটের কোনো হোটেলে এমন ব্যবস্থা নাই, বন্ধ বাড়য্যের হোটেলেও না। ব্যবসা ভাল করিয়া চালাইতে হইলে এ-সব ব্যবস্থা দরকার, নইলে রেলগাড়ীর সময়ে ইন্টিশানে গিয়া শুধু "আস্কন বাবু, ভাল হিন্দুহোটেল বলিয়া চেচাইলে কি আর খদের আসে ? খন্ধেররা খোজে আরামে ভাল খাওয়া । যে দিতে পারিবে, তাহার ওখানেই লোক ঝুঁকিবে। অবগু ইহ। সে বোঝে, আজ যদি একটা হোটেলে বিশ্রামের ঘর করে, তবে দেখিতে দেখিতে কালই রাণাঘাটের বাজারময় সব হিন্দু-হোটেলেই দেখাদেখি বিশ্রামের ঘর খুলিয়া বসিবে— যদি তাহাতে খদের টানা যায় । তবুও একবার নাম বাহির করিতে পারিলে, প্রথম যে নাম বাহির করে তাহারই স্থবিধা। আরও কত মতলব হাজারির মাথায় আছে, শুধু খন্দেরের বিশ্রাম ঘর কেন, মোকদ্দমা মামলা যাহারা করিতে আসে, তাহারা সারাদিনের খাটুনির পরে হয়তো খাইয়া-দাইয়া একটু তাস খেলিতে চায় – সে ব্যবস্থা থাকিবে, পান-তামাকের দাম দিতে হইবে না, নিজেরাই সাজিয়া থাও বা হোটেলের চাকরেই সাজিয়া দিক । চুণা নদীর ধারে ধসিয়া এক ভাবিলে এমন সব কত নতুন নতুন মতলব তাহার মনে আসে। কিন্তু কখনো কি তাহা ঘটিবে ? তাহার মনের আশা পূর্ণ হইবে ? বয়স তো হইয়া গেল ছ’চল্লিশের উপর—সারাজীবন কিছু করিতে পারে নাই, সাত টাকা মাহিনার চাকুরি আজও ঘুচিল না—ছ-পোষা গরীব লোক, কি করিয়া কি হইবে, তাহা সে ভাবিয়া পায় না।