পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল & —দে একটা । আর তুই খেতে যা । বেলা অনেক হয়েচে । কিন্তু কুস্কমের দেখা গেল, খাওয়ার সম্বন্ধে কোনো তাড়া নাই। হাজারিকে পান দিয়া সেই ষে হাজারির সামনে মেজেতে বসিয়া গল্প করিতে লাগিল—প্রায় ঘণ্টাখানেক হইয়া গেল। সে নড়িবার নামও করে না দেখিয়া হাজারি ব্যস্ত হইয়া পড়িল । বলিল—তুই খেতে যা না। আমি যাই, আবার উকুনে আঁচ দিতে হবে সকাল সকাল। কুসুম বলিল—যাচ্ছি এবার। বলিয়া আর যায় না। আরও আধঘণ্টা কাটিয়া গেল । কুস্কম আর যায় নাই। বাবা মারা গিয়াছে, ভাইয়ের গরীব বলিয়া হউক বা ভাইবোঁদের জন্যই হউক—তাহাকে বাপের বাড়ীতে কেহ লইয়া যায় না। নিজে দু-একবার গিয়াছিল, বেশী দিন টিকিতে পারে নাই। ভাইবোঁদের ব্যবহার ভাল নয়। হাজারির সঙ্গে কুষম সেই সব কাহিনীই বলিতে লাগিল। ছেলেবেলায় গ্রামে কি পথে করিয়াছিল কি, সেই বিষয়ে কথাও তাহার আর ফুরায় না। —এখানে ছোলার শাক পয়সা দিয়ে কিনতে হয়। আমাদের গায়ের যুগীপাড়ার মাঠে আমরা ছোলার শাক তুলতে যেতাম জ্যাঠামশায়—একবার, তখন আমার বয়েস ন’বছর, আমি আর সাধু কুমোরের মেয়ে আদর, আমরা দুজনে গিয়েছি ছোলার শাক তুলতে— একটা মিন্সে দেখি জ্যাঠামশায় ছোলার ক্ষেতে বসে কচি ছোলা তুলে তুলে খাচ্ছে। আমাদের ন। দেখে দেড় দেড়, বিষম দোড়! আমরা তো হেসে বাচিনে—ভেবেছে বুঝি আমাদের ক্ষেত । বলিয়া কুস্কম মুখে কাপড় দিয়া হাসিতে হাসিতে গড়াইয়া পড়ে আর কি ! হাজারি দেখিল, ইহার ছেলেমাহষী গল্প শুনিতে গেলে ওদিকে হোটেলে যাইতে বিলম্ব হইবে-পদ্ম ঝি মুখ-নাড়ার চোটে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিবে । সে উঠিতে ধাইতেছে, কুসুম বলিল—দাড়ান জ্যাঠামশায়, আপনার জন্যে একটা জিনিস করে রেখেছি । সেইটে দেবার জন্তেই আপনাকে নিয়ে এলাম। বলিয়া একটা কাপড়ের পুটুলি খুলিয়া একখানা কাথা বাহির করিয়া হাজারির সামনে মেলিয়া ধরিয়া বলিল—কেমন হয়েছে কাথাখান ? —বাম, বেশ হয়েছে রে । কুসুম কাথাখানি পাট করিতে করিতে হাশিমুখে বলিল—আপনি এখানা রাত্রে পেতে শোবেন। আপনি শুধু মাদ্বরের উপর শুয়ে থাকেন হোটেলে,—আমার অনেক দিনের ইচ্ছে একখানা র্কাথ আপনাকে সেলাই ক’রে দেব । তা দু-তিন মাস ধরে একটু একটু ক’রে এখানা আজ দিন পাচ-ছয় হ’ল শেষ হয়েছে । হাজাৰ্বি ভারি খুশী হইল। কুমুমের বাবা রসিক ঘোষ প্রায় তাহার সমবয়সী। কুষম তাহার মেয়ের সমান। একই গায়ের লোক,—তাহা হইলেও কি সবাই করে ? গীয়ে তো কত লোক আছে! .