পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는 বিভূতি-রচনাবলী সেই চালবাজ বার্ডদাই-খোর শালাকে দিয়া খাওয়াইতে হইবে—এ প্রস্তাব হাজারির মোটেই ভাল লাগিল না । কিন্তু সে ভালমাস্থ্য এবং কিছু ভীতু ধরনের লোক, যাহাঁদের হোটেল, তাহারা যদি খাইতে চায়, হাজারি তাহা না দিয়া পারে কি করিয়া—অগত্যা হাজারিকে পদ্ম বিয়ের সামনে বড় জামবাটিতে ডেকৃচির মাংসটুকু ঢালিয়া রান্নাঘরের কুলুঙ্গিতে রেকাবি চাপ দিয়া রাখিয়া দিতে হইল । - e সামান্ত একটু বেলা আছে, হাজারি সেটুকু সময়ের মধ্যেই একবার নদীর ধারে ফাকা জায়গায় বেড়াইতে গেল । আজ তাহার মনে আত্মপ্রত্যয় খুব বাড়িয়া গিয়াছে—দুইটি জিনিস আজ বুঝিয়াছে সে । প্রথম, ভাল রান্না সে ভুলিয়া যায় নাই, কলিকাতার বাবুরাও তাহার রান্না খাইয়া তারিফ করেন। দ্বিতীয়, পরের তাবে কাজ করিলে মানুষকে মায়া-দয়া বিসর্জন দিতে হয়। আজ এমন চমৎকার রান্না মাংসটুকু সে কুস্কমকে খাওয়াইতে পারিল না, খাওয়াইতে হইল তাহাজের দিয়া, যাহাদের সে দুই চক্ষু পাড়িয়া দেখিতে পারে না। কুসুম যেদিন কাথাখানি দিয়াছিল, সেদিন হইতে হাজারির কেমন একটা অদ্ভুত ধরনের স্নেহ পড়িয়াছে কুস্কমের ওপর । বয়সে তো সে মেয়ের সমান বটেই, কাজও করিয়াছে মেয়ের মতই। আজ যদি হাজারির হাতে পয়সা থাকিত, তবে সে বাপের স্নেহ কি করিয়া দেখাইতে হয়, দেখাইয়া দিত। অন্ত কিছু দেওয়া তো দূরের কথা, নিজের হাতে অমন রান্না মাংসটুকুই সে কুঙ্কমকে দিতে পারিল না । ছেলেবেলাকার কথা হাজারির মনে হয়। তাহার মা গঙ্গাসাগর বাইবেন বলিয়া ধোগাড়যন্ত্র করিতেছেন—পাড়ার অনেক বৃদ্ধা ও প্রৌঢ়া বিধবাদের সঙ্গে । হাজারি তখন আট বছরের ছেলে—লেও ভীষণ বায়না ধরিল গঙ্গাসাগর সে না গিয়া ছাড়িবেই না। তাহার ঝুকি লইতে কেহই রাজী নয়। সকলেই বলিল—তোমার ও ছেলেকে কে দেখাশুনো করবে বাপু, অত ছোট ছেলে আর সেখানে নানান ঝক্কি—তাহ’লে তোমার যাওয়া হয় না। হাজারির মা ছেলেকে ফেলিয়া গঙ্গাসাগরে যাইতে পারিলেন না বলিয়া তার যাওয়াই হইল লা। জীবনে আর কখনোই তার সাগর দেখা হয় নাই, কিন্তু হাজারির মনে মায়ের এই স্বাৰ্থত্যাগের ঘটনাটুকু উজ্জল অক্ষরে লেখা হইয়া আছে। হাজারি ভাবিল—যাক গে, যদি কখনো নিজে হোটেল খুলতে পারি, তবে এই রাণাঘাটের বাজারে বসেই পদ্ম বিকে দেখাবো—তুই কোথায় অণর আমি কোথায় ! হাতে পয়সা থাকলে কালই না হোটেল খুলে দিতাম ! কুস্কমকে রোজ রোজ ভাল জিনিস খাওয়াবে আমার নিজের হোটেল হলে । কতকগুলি বিষয় সে যে খুব ভাল শিথিয়াছে, সে বেশ বুঝিতে পারে। বাজার-করা হোটেলওয়ালার একটি অত্যন্ত দরকারী কাজ এবং শক্ত কাজ। ভাল বাজার করার উপরে হোটেলের সাফল্য অনেকখানি নির্ভর করে এবং ভাল বাজার করার মানেই হইতেছে সন্তা