পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল ৩১ মুরুবিয়ানা সদ্ধ করিতে হইবে না। বাশবনের ছায়ায় পূর্ণ শাস্তিতে সে যদি ঘণ্টার পর ঘণ্ট ধরিয়া ঘুমায়—তাহা হইলেও কেহ কিছু বলিতে পারিবে না। এই মুক্তি সে ভাল ভাবেই আস্বাদ করিতে চায় বলিয়াই তো হোটেল খুলিবার কথা এত ভাবে । সে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়াছে, এইবার কিছু টাকা হইলেই সে রাণাঘাটের বাজারে হোটেল খুলিয়া দিতে পারে। হাজারি সত্যই চিন্তা করিতে আরম্ভ করিল, টাকা কোথায় ধার পাওয়া যাইতে পারে। এক গ্রামের গোসাইরা বড় লোক, কিন্তু তাহারা প্রায় সবাই থাকে কলিকাতায় । এখানে বৃদ্ধ কেশব গোসাই থাকেন বটে-কিন্তু লোকটা ভয়ানক কৃপণ—তিনি কি হাজারির মত সামান্ত লোককে বিনা বন্ধকে, বিনা জামিনে টাকা ধার দিবেন ? হাজারির জামিন হইবেই বা কে ! তাহার অবস্থা অত্যন্তই খারাপ। দু’খানা মাত্র চালাধর । রান্নাঘরখানা গত বর্ষায় পড়িয়া গিয়াছে—পয়সা অভাবে সারানো হয় নাই, উঠানের আমতলায় রান্না হয়—বৃষ্টির দিন এখন ক্রমশঃ চলিয়া গেল, এখন তত অস্ববিধা হয় না। বেলা প্রায় পড়িয়া আসিয়াছে। হাজারি বাড়ী ফিরিয়া দেখিল, তাহার ছোট মেয়ে টেপি ঘরের দাওয়ায় বসিয়া উল বুনিতেছে। টেপি বাৰাকে দেখিয়া বলিল—তোমার জন্ত আসন বুনচি বাবা-কাল তুমি যদি থাকে, কালকের মধ্যে হয়ে যাবে। তোমার সঙ্গে দিয়ে দেবো। হাজারি মনে মনে হাসিল। বেচু চকত্তির হোটেলে সে রঙীন পশমের আসন পাতিয়া থাইতে বসিয়াছে—ছবিটি বেশ বটে। পদ্ম কি কি মন্তব্য করিবে তাহা হইলে ? মেয়েকে বলিল—দেখি কেমন আসন ? বা বেশ হচ্ছে তো, কোথায় শিখলি তুই বুনতে ? টেপি বলিল—মুখুয্যে-বাড়ীর নীলা-দি আর অতসী-দি’র কাছে। আমি রোজ যাই দুপুরে, ওরা আমায় গান শেখায়, বোন শেখায়। —ওরা এখনও আছে ? হরিচরণবাবু চলে যান নি এখনও ? —ওরা নাকি এ মাসটা থাকবে । থাকলে তো আমারই ভাল—আমি কাজটা শিখে নিতে পারি। কি চমৎকার গান গাইতে পারে অতসী-দি । আজ শুনবে বাবা ? —তুই গান শিখলি কিছু ? টেপি লাজুক স্বরে বলিল—দু-একটা । সে কিছু নয়। তুমি অতসী-দির গান যদি শোনে, তবে বলবে যে কলের গানের রেকর্ড শুনচি। ওদের বাড়ী খুব বড় কলের গানও আছে। রোজ সক্ষ্যের পর বাজায়। কত রকমের গান আছে—বাবে শুনতে সন্ধ্যের পর ? অতসী-দি নিজে কল বাজায়। আমিও ষাবো তোমার সঙ্গে—অতসী-দিকে বলবো বাবা এসেচে, ভালো ভালো বেছে গান দেবে। de