পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এঃ কিছু মিল আছে। কিন্তু যে ঈশ্বর স্থইর ভিতরে থেকেও থষ্টকে অতি কম করে আছেন, তা প্যানখীইজ মে নেই। কিন্তু আগেই বলেছি শিল্পী তার শিল্পশ্বটির ভিতর দিয়ে একটা সত্যে গিয়ে পৌঁছন এবং নিজের অনিবার্য গরজে নিজের জন্য একজন চেতনা-সম্পন্ন ঈশ্বরকে স্বষ্টি করে নেন । এ ঘটনা কোনো প্রচলিত তত্ত্বের মধ্যে পড়ে না । অতএব স্পিনোজার মত আলোচনা আর বেশিদূর চালিয়ে লাভ নেই। বিভূতিবাৰু বিভূতিবাবুই—কোন তত্বের সঙ্গে তার কথা মিলুক আর নাই মিলুক। তার ঈশ্বর তার নিজেরেই ঈশ্বর। তবাবুর ডায়ারি পড়লে দেখা যায়, তিনি আনন্দে উন্মাদ হতে পারেন কিন্তু কোনো কিছু ভাবে আঁকড়ে ধরা তার ধাতে নেই। প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রভাবে •বিভূতিবাবু আবেগময়, তার সমস্ত সত্তায় একটা ec৪tasy, সমস্ত অন্তর উগ্র আনন্দে বেপমান, প্রবল শিহরণে দিশহারা। এই রকম একটা অবস্থা বিভূতিবাবুর মধ্যে আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি । * ১৯৩৩, ৪ঠা মার্চের ঘটনা। ছোটনাগপুরের পাহাড়ী পথে চলতে চলতে আগুনের মতো জলে ওঠা পলাশফুলের অরণ্য দেখে ট্রেনের মধ্যে বিভূতিবাবু যে ভাবে বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন, প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রভাবে কেউ যে এমন অপ্রকৃতিস্থ হতে পারে তা কখনো ভাবতে পারিনি। আমি নিজে একবার স্কুল জীবনে প্রথম ৬••• ফুট উচু হিমালয় শহরে যাবার পথে এবং শহরে গিয়ে এমনি অপ্রকৃতিস্থ হয়েছিলাম । এবং যা দেখেছিলাম তা সত্য না স্বপ্ন—হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখছিলাম। মনে হল বিভূতিবাবুও সেদিন তেমনি বিচলিত। তিনি সেই অবিন্যস্ত উন্মাদ-করা দূতে ট্রেনের মধ্যে কখনো অর্থহীন চীৎকার করেছেন, কখনো লাইন কীর্তন গান গেয়েচেন, ছটফট করে ক্রমাগত 'দেখুন দেখুন’ করেছেন। তারপর আচঙ্গিতে এক সময় আমার হাত ধরে আমার চোখের দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চীৎকার করে বলে উঠেছেন, পরিমলবাবু, ক্ষেপে যান, এ ছাড়া উপায় নেই। তিনি নিজে ক্ষেপেছেন, অতএব আমাকেও ক্ষেপতে হবে। আমিও সে দৃশ্বে অবসন্ন হয়ে পড়েছিলাম, অতিভোজের ফলে যেমন হয়। কিন্তু আদেশমাত্র বিভূতিবাবুর সমপর্যায়ে, ক্ষেপ আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না । - বিভূতিবাবুর অরণ্য-পর্যায়ের লেখাতে অনেক জায়গাতেই দেখা যাবে চলতে চলতে গাছপালার সৌন্দর্যে তিনি অভিভূত হয়ে পথচলা থামিয়ে দিয়েছেন। বসে পড়েছেন মাটিতে অনেক সময়। এই যে মূঢ় আনন্দ, এর কি কোনো ব্যাখ্যা আছে ? মনটা যে কি বস্তু তাই তো জানা যায় না, এর মধ্যে কত জাড়ের কত তন্ত্রী। সৌন্দর্যের আঘাতে কারো সকল সৌন্দর্যতন্ত্রী একসঙ্গে ঝঙ্কত হয়ে ওঠে, কারো বা কম হয়, কারো বা কিছুই হয় না। এ নিয়ে তর্ক চলে না। নিসর্গ দৃপ্ত যাদের মনে সাড়া জাগায়, তারা বিভূতিবাবুর অরণ্য-কথাগুলি পড়বেন। বিভূতিবাবুর শোনা অরণ্যের ভাষা তাদের কানেও প্রবেশ করবে। তার প্রত্যেকটি ভ্রমণ বা ডায়ারি বা অরণ্যকথা বাংলাসাহিত্যের এক অসামান্ত সম্পদ। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে এমন মোহাজন-পরা দৃষ্টিতে দেখে এমন সুরল ভাবে এমন অস্তরের সঙ্গে আবেগের সঙ্গে আর কোনো