পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এমন ব্যাকুলতাও কারো লেখায় দেখিনি। বিভূতিবাবুর কাছে ডায়ারিতে উল্লেখকরা ব্যক্তিদের পরিচয় বড় নয়, স্থান ও কাল নিয়েও তিনি খুব কমই ভেবেছেন, অনেক সময়েই স্পষ্ট তারিখ পাওয়া যায় না। খেয়াল নেই যে, এই সব কেউ পড়ে মামুষের বা স্থানের বা কালের পরিচয় জানতে চাইবে । আগেই বলেছি লেখার ভিতরে একটা উদাসীনতা এদিক থেকে আছে । বন্ধন এসেছে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তা কাটতে কাটতে এগিয়ে গেছেন। যে গেল সে গেল, কি আর করা যাবে, এই রকম একটা দার্শনিকতার পরিচয় পাওয়া যায় এতে ( যেখানে স্নেহ ভালবাসা, সেখানেই ধরা দিয়েছেন, সেখানেই আপ্ন-ত হয়েছেন, কিন্তু আপন্ন ইননি। স্নেহভালবাসার অমৃতত্ত্বদে পড়েও গলে যাননি । কোনো আকর্ষণের কথা ভাল করে বলতে না বলতে প্রসঙ্গাস্তরে চলে গেছেন। ব্যতিক্রম একমাত্র বিশ্বপ্রকৃতির আনন্দ ভোগের ক্ষেত্রে। র্তার সকল বন্ধনের মধ্যে একটা স্নিগ্ধ পবিত্রতা। সকল বন্ধন ছেড়ার মধ্যে একটা উদার উদাসীনতা り প্রকৃতির বিরাট মহিমার অসহ আনন্দের আঘাতে বিভূতিবাবু যখন পরাজিত, তখন তিনি স্বীকার করেন, “কি মহিমা বিরাটের। তুমি আমাকে ভালবেসে এখানে এনেচ, তোমার এ বিরাট রূপকে প্রত্যক্ষ করবার স্বযোগ দিয়েচ । কিন্তু আমি তোমার এ রূপের সামনে দিশাহারা হয়ে যাই, দেবতা। আমার সেই তিতপল্লা ফুলের ঝোপই ভালো। বনসিমলত ঘাটের সেই মাকাল ফলই ভালো। তোমার এ রূপ দেখে আমি ভয় পাই ।” জোহান পাউল রিকটের-লিখিত একটি চমৎকার স্বপ্নের সঙ্গে এর কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। একটি লোককে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করাবার জন্য তাকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের পর বিশ্ব দেখতে দেখতে তার মাথা ঘুরতে লাগল, কিন্তু এর পরেও সীমাহীন মহাশূন্যে আরো বিশ্ব আছে জেনে লোকটি দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে থেমে গেল, তার সমস্ত দেহ কাপতে লাগল, চোখ দিয়ে জল গড়াতে লাগল। অসীমের গুরু ভারে পিষ্ট হৃদয়ে সে বললে, “এঞ্জেল, আমি আর এগিয়ে যেতে পারছি না, ঈশ্বরের মহিমা অসহ বোধ হচ্ছে ; আমি কবরে প্রবেশ করে এই অসীমের নির্যাতন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখি, কারণ আমি যে এর কোথাও শেষ দেখতে পাচ্ছি না।” তখন এঞ্জেল তার মহিমময় হাতখানি মহাশূন্যের দিকে তুলে ধরে বললেন, "ঈশ্বরের এই মহা বিশ্বের শেষ তো নেই, বৎস। আরো দেখো, এর আরম্ভও নেই।" * রিকটের, ঈশ্বরের মহিমার যে ছবিটি একেছেন, অসীমের গুরু ভারে পিষ্ট মামুষের আর্ত আমার ক্ৰন্দন, বিভূতিবাবুর লেখায় এরই প্রতিধ্বনি মিলবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এ সাহিত্য এদেশে আর লেখা হয়নি, সম্ভবত আর কখনো হবেও a།) পরিমল গোস্বামী