পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ বিভূতি-রচনাবলী —বয়েস থাকলে কী হবে, একটা বিয়ে করে তাই খেতে দিতে পার না, দুটো বিয়ে করে তোমার উপায় হবে কী ? কুঁজোর সাধ হয় চিত হয়ে শুতে— এই কথায় যদুবাবুর পৌরুষের অভিমান ভীষণভাবে আহত হওয়ায় তিনি আর কোন কথা না বলিয়া পাশ ফিরিয়া শুইলেন এবং বোধ হয় খানিকক্ষণ পরেই গভীর নিত্রায় अडिफूऊ श्हेtजन। চুনি এবার থার্ড ক্লাসে উঠিল । চেহারা আরও স্বন্দর হইয়াছে, ওষ্ঠে গোফের ঈষৎ রেখা। নারাণবাবু পড়াইতে গিয়া তাহার সঙ্গে গল্প করেন নানা বিষয়ে—চুনিকে ছাড়িয়া যেন উঠিতে ইচ্ছা হয় না। চুনির মধ্যে একটি স্বছন্নভ রহস্ত ও বিস্ময়ের ভাণ্ডার যেন গুপ্ত আছে, নারাণবাবু নানা কথায় ও প্রশ্নে সেই রহস্তভাণ্ডারের সন্ধান খুজিয়া বেড়ান। চুনি আসিবামাত্র নারাণবাবু কেমন আত্মহারা হইয়া যান—ভাল করিয়া পড়াইতেও যেন পারেন না, কেবল তাহার সহিত গল্প করিতে ইচ্ছা করে! অথচ চুনি তাহাকে কী দিতে পারে ? তাহাকে সে রাজা করিয়া দিবে না, নারাণবাৰু তাহ ভালই জানেন ; তবুও কেন এমন হয়, কে জানে ? মাস্টার পড়াইতে আসিয়া ঘন ঘন ঘড়ির দিকে তাকায়, উঠিতে পারিলে বঁাচে ; অথচ নারাণবাবুর উঠতে ইচ্ছা করে না, রাত্রি বেশী হইয়া যায়, চুনি পান্না ঘুমে ঢলিয়া পড়ে, কলিকাতার কলকোলাহল নীরব হইয় আসে। নারাণবাৰু ধমক দিয়া বলেন, এই চুনি, এই পান্না, ঢুলছিল নাকি ? পান্না চমকিয়া উঠিয়া বইয়ের পাতায় মন দিবার চেষ্টা করে, নিচু সলঙ্গ স্বরে বলে, ঘুম আসছে স্তার, রাত অনেক হল— চুনির মায়ের স্বর খোলা দ্বারপথে ভাসিয়া আসে ; আজ তোদের কি হবে না নাকি ? সারা রাত বসে ভ্যাজর ভ্যাজর করলেই বুঝি ভাল পড়ানো হয় ? পরে ঈষৎ নেপথ্য হইতে শ্রত হইল সেই একই কষ্ঠের স্বর : বুড়ে মাস্টারটা বলে বসে করে কী এত রাত পৰ্য্যস্ত ? এত করে বলি ওঁকে, বুড়ো মাস্টার বদলে ফেল—ৰুড়ে দিয়ে কি নেকাপড়া হয় ? চুনি লাফাইয়া উঠিয়া বাড়ীর মধ্যে মাকে হয়তো বা মারিতে ছোটে। নারাণবাৰু ধমক দিয়া চিৎকার করিয়া বলেন, এই চুনি কোথায় বাস । পায় যা তো, তোর দাদাকে ধরে নিয়ে আয় । কিছুক্ষণ পরে চুনি ঘৰ্ম্মাক্ত রাঙা মুখে আসিয়া ছাপাইতে থাকে। —কোথায় গিয়েছিলি ? • —কোথাও নাস্তার। —এট সব জ্ঞান হচ্চে তোমার, না ? —না স্তার। আপনি তাই সহ্য করেন, আপনার খেয়াল নেই কোনও দিকে। আমাদের বাড়ীতে আসেন, তা আমাদের কত ভাগ্যি। রোজ রোজ, মা এরকম করবে আমি—