পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী শেষ পৰ্য্যস্ত যাইতেই হইল-নাছোড়বান্দা রাখাল মিত্তিরের হাতে পড়িলে না গিয়া উপায় নাই। সেই ছোট একতলার কুঠুরি। এই অগ্রহায়ণ মাসেও যেন গরম কাটে না। একখানা নীচু কেওড়া কাঠের তক্তাপোশের উপর মলিন বিছানা। কেরোলিন কাঠের একটা আলমারিভত্তি বই। ঘরখানা অগোছালো, অপরিষ্কার, মেঝের উপরে পড়িয়া আছে দুইটা ছেড়া জামা ছেলেপুলেদের, এক বোতল আঠা, একটা আলকাতরা মাখানো মালসী। ক্ষেত্রবাৰু বলিলেন, কী বই রাখালবাবু, আলমারিতে ! —দেখবেন ? এ সব বই—এই দেখুন— রাখালবাৰু সগৰ্ব্বে বই নামাইয়া দেখাইতে লাগিলেন। –এই দেখুন প্রকৃতিৰোধ অভিধান। পুরনো বইয়ের দোকান থেকে তিন টাকায়— আর এই দেখুন মুগ্ধবোধ—মশাই, সংস্কৃত ব্যাকরণ না পড়লে কি ভাষার ওপর দখল দাড়ায় ? সহৰ্ণেৰঃ থেকে আরম্ভ করে সব স্বত্র তিনটি বছর ধরে মুখস্থ করে ভোতা হয়ে গিয়েছে, তাই আজ ছু-এক পয়সা ক'রে খাচ্চি। রাখাল মিত্তিরের ব্যাকরণের ভুল ধরে, এমন লোক তো দেখি মে। গোয়ালটুলি স্কুলের হেডপণ্ডিত সেদিন বললে—মিত্তির মশাই, আপনার ব্যাকরণ পড়লে ছেলেদের সন্ধি আর সমাস গুলে খাওয়া হয়ে গেল। পড়া চাই—পেটে বিচ্ছে না থাকলে— —আপনার বই ধরিয়েচে নাকি ? —না, হেডমাস্টার বললে, শশিপদ কাব্যতীর্থের ব্যাকরণ আর-বছর থেকে রয়েছে ক্লাসে। এ বছর যুদ্ধের বছরট, বই বদলালে গার্জেনরা আপত্তি করবে—তাই এ বছর আর হল না। সামনের বছর থেকে নিশ্চয়ই দেবে। একটি বারো-তেরে বছরের রোগা মেয়ে, একটা থালায় দুটি আংটাভাঙা পেয়াল বসাইয়। চা মানিল। রাখালবাবু বলিলেন, ও পাচী। এটি আমার ভাগ্নী—আমার যে বোন এখানে থাকে, তার মেয়ে—প্রণাম কর মা, উনি ব্রাহ্মণ । —আহা, থাক্ থাকৃ। এস মা, হয়েছে—কল্যাণ হোক। বেশ মেয়েটি । —অস্বখে ভুগছে। বৰ্দ্ধমানে দেশ, কেউ নেই। এবার এক জ্ঞাতি কাকা নিয়ে গিয়েছিল, ম্যালেরিয়ায় ধরেচে। যাও মা, দুটো পান নিয়ে এস তোমার মামীমার কাছ থেকে। চা মিষ্টি হয়েছে ? চিনি নেই, আখের গুড় দিয়ে— —ন। না, বেশ হয়েছে । দুখচিনিবিহীন বিম্বাদ চা, তামাক-মাথা গুড়ের গন্ধ,এক চুমুক খাইয়া বাকিটুকু গলাধঃকরণ করিতে ক্ষেত্রবাবুর বিশেষ কসরৎ করিতে হইল। রাখালবাবু বলিলেন, তা তো হল, কী হাঙ্গামা বলুন দিকি ! পাড়া যে খালি হয়ে গেল অৰ্দ্ধেক ! --আপনাদের এ পাড়াতেও } —ৰ্য মশাই, আশেপাশে লোক নেই। সব পালাচ্ছে। পাশের বাড়ীর ঘোষালের