পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী সব রিপোর্টের উপর ভিত্তি করিয়া হেডমাস্টার নিজে রিপোর্ট লিখিয়া অভিভাবকদের মধ্যে ছাপাইয়া বিলি করেন। তাহার ধারণা, ইহাতে স্কুলে ছেলে বাড়িবে। রিপোর্ট পড়িয়া সকলের মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন, কী রকম হয়েছে ? সকলেই বলিলেন, চমৎকার রিপোর্ট হইয়াছে, এমনধারা হয় না। —থার্ডক্লাসের ইংরিজী নিতেন কে ? যন্ধুবাবু বলিলেন, আমি স্তার। —ভীষণ খারাপ ফল এবার আপনার সাবজেক্টে। আপনি লিখিত কৈফিয়ত দেবেন— —যে আঞ্জে স্তার। —ক্লাস সেভেনের ইতিহাস কে নেয় ? ঐশবাৰু বলিলেন, আমি স্তার। —সকলের চেয়ে ভাল ছেলে মোটে ষাট পেয়েছে। , —স্যার, প্রশ্ন বড় কঠিন হয়েছিল—সিলেবাস ছাড়া প্রশ্ন হলে কী করে ছেলেরা— —ন। এমন কিছু কঠিন নয়। প্রশ্নপত্র সব আমি আর মি: আলম দেখে দিয়েছি। কমিটীতে এ কথা আমায় রিপোর্ট করতে হবে । লিখিত কৈফিয়ত দেবেন। আর এবার বাড়ী বাড়ী গিয়ে একটু ক্যানভাস করা দরকার হবে ছুটির পরে। নইলে ছেলে হবে না। ক্ষেত্রবাৰু ভয়ে ভয়ে বলিলেন, কিন্তু স্যার, এদিকে শহর যে খালি হয়ে গেল— সাহেব তাচ্ছিল্যের স্বরে বলিলেন, কে বললে ? বহুবাৰু ও শ্ৰীশবাবু দাড়াইয়া বলিলেন, সেই রকমই দেখা যাচ্ছে স্যার। ক্ষেত্রবাবু ঠিক বলেছেন । গেম্‌ মাস্টার বিনোদবাবু বলিলেন, আমাদের পাড়াতে তো আর লোক নেই। জগদীশ জ্যোতিবিনোদ বলিল, আমি এক জায়গায় ছেলে পড়াই, তারা চলে গিয়েছে । তাদের পাড়া খালি। সাহেব মি: আলমের দিকে চাহিয়া বলিলেন, কী মি: আলম, আপনি কি দেখেছেন । এই রকম হয়েছে নাকি ? - মিঃ আলম উঠিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, না স্যার। এখানে ওখানে দু-একটা বাড়ী খালি হয়েছে বটে। কিছুই নয়। ক্ষেত্রবাৰু প্রতিবাদের স্বরে বুলিলেন, কিছু না কী রকম মিঃ আলম। হাওড়া স্টেশনে নাকি বেজায় ভিড় হচ্চে-কুলি আর ঘোড়ার গাড়ীর দর বেজায় বেড়েছে— —ওসব গুজব। কই, আমি তো রোজ বেড়াই, কিছু দেখি নি। এমন সময় রামেলুবাবু বাহির হইতে একখানা খবরের কাগজ লইয়া ঘরে ঢুকিয়া সাহেবের টেবিলে রাখিয়া বলিলেন, দেখুন স্যার, হংকং যায় যায়-জাপানীরা লিঙ্গাপুরে দূর-পাল্লার কামানের গোলা ছড়েচে।