পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী —কোথায় যাবেন ভাবচেন ? —কোথায় যে যাই –হাতে পয়সা নেই, দেশঘর নেই। তোমার তবুও তো দেশে বাড়ীম্বর আছে, আমার যাবার স্থান নেই। এক আছে জ্ঞাতি-ভাইয়ের বাড়ী, বেড়াবাড়ী বলে গ্রাম, তা সেখানে তারা যে রকম ব্যবহার করেচে–পরের বাড়ী, কোন জোর তো সেখানে খাটে না ! তুমি কোথায় যাবে ভাবচ ? —আমারও সেই একই অবস্থা। অস্িিসংড়িতে–মানে আমাদের দেশে—কতকাল যাই নি। বাড়ীম্বর এতদিনে ভূমিসাং-নয়তো একগলা জঙ্গল, সাপ-ব্যাঙের আড়া হয়ে আছে । মেয়েছেলে নিয়ে সেখানে গিয়ে দাড়াই কী করে ? আমার স্ত্রী বলছিল, গয়াতেশ্বশুরবাড়ী— —সেই সব চেয়ে ভাল আমার মতে । তাই কেন যাও না ? —পয়সা পয়সা কোথায়? স্কুলে খাটব, ছু মাস পরে এক মাসের মাইনে নেব—এই তো অবস্থা। জানেন তো সবই । —আচ্ছা, তোমার কী মনে হয় ভায়া ? জাপানীরা কি এতদূর আসবে ? সিঙ্গাপুর নিতে পারবে ? —কী করে বলব ? তবে আমার এক জানাশোনা গবর্মেণ্ট অফিসার বলছিল, সিঙ্গাপুর হঠাৎ নিতে পারবে না। ওখানে যুদ্ধ হবে দারুণ, এবং সে যুদ্ধ কিছুকাল চলবে। —তবে কলকাতাতে বোমা ফেলতে পারে, কী বল ? —ফেলতে পারে। সাহেব যাই বলুক, কলকাতা খুব সেফ হবে না। —স্কুলটাতে ছুদিন বেশী ছুটির কথা বলে দেখলে হয় না ? —সাহেবকে তা বলা যাবে না। সাহেব ভিজবে না। ক্ষেত্রবাবু আর কিছুক্ষণ কথাবাৰ্ত্ত কহিয়া বিদায় লইলেন। র্যাক-আউটের কলিকাতা, খুটফুটে অন্ধকার—কাল হইতে আলো আরও কমাইয়া দিয়াছে। মোড়ের কাছে এক জায়গায় ঘোড়ার গাড়ির আড়া। ক্ষেত্রবাবুর কৌতুহল হইল, গাড়ির ভাড়া কেমন হাকে একবার দেখিবেন । - রাস্ত পার হইতে ভয় করে। অন্ধকারের মধ্যে দূরে বা নিকটে বহু আলো তাহার দিকে আসিতেছে—যুটফুটে অন্ধকারের মধ্যে বোঝা যায় না, কত বেগে সেগুলি এদিকে আসিতেছে। ক্ষেত্রবাৰু সন্তপণে সন্তপণে রাস্তু পার হইয়া গাড়ীর আড্ডার কাছে গিয়া বলিলেন, ওরে গাড়োয়ান, ভাড়া যাবি ? - একখানা গাড়ির ছাদে একটা লোক শুইয়া ছিল। উঠিয়া বলিল, কাহ ধানে হোগ। বাবুজি ? —হাওড়া ইষ্টিশানে । -আভি বাইয়েগা । —ষ্ঠা,এখুনি।