পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অমুবৰ্ত্তন - —তিন চার জন আছে—মালপত্তর । কত ভাড়া নিবি ? —এক বাত বোলেগা বাবুজি । চার রূপেয়া। —কত? —চার রূপেয়া বাৰুজি। কাল ইসে আউর বাঢ়েগ৷ বাবুজি। কাল পান্‌ছ রুপেয়। হোগা । দিন দিন বাঢ়তে যাতা হায়—যাবেন আপনি ? সওয়ারী কোথা থেকে যাবে ? ক্ষেত্রবাবু কী একটা অজুহাত দেখাইয়। সেখান হইতে সরিয়া পড়িলেন। তাহার হাত-পা যেন অবশ হইয়া আসিতেছে—সম্মুখে যেন ঘুেরে বিপদ ঘনাইয়া আসিতেছে, প্রলয় অথবা মৃত্যু স্ত্রীপুত্ৰ লইয়া এই ব্ল্যাক-আউটের ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন কলিকাতা শহরে তিনি বোতলের ছিপি আঁটা অবস্থায় বুঝি মারা পড়িলেন । ঘোড়ার গাড়ীর ভাড়া দিনে দিনে যদি অসম্ভব অঙ্কের দিকে ছোটে, তবে তার মত গরীব স্কুল-মাস্টার তো নিরুপায়। মোড়ের মাথায় বিষ্ণু ভট্টচাজের সঙ্গে অন্ধকারে প্রায় মাথা ঠুকিয়া গেল। পরস্পরকে চিনিয়া পরস্পর ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। বিষ্ণু হাওড়ার রেলওয়ে মালগুদামে কাজ করে, বলিল, ও, জানেন ক্ষেত্রদী, কী কাও আজ হাওড়া স্টেশনে ! প্রত্যেক ট্রেন ছাড়ছে, লোকে লোকারণ্য। লোক গাড়ীতে উঠতে পাচ্ছেনা—দশ টাকা, পনেরো টাকা করে কুলির নিচ্ছে। আবার শুনছি, হাওড়া ব্রিজ দিয়ে গাড়ী-ঘোড়া যাওয়া বদ্ধ করে দেবে। এত ভিড় যে, স্ট্র্যাও রোড একেবারে জ্যাম্—ই. আই. আর.-এর গাড়ীতে ওঠবার উপায় নেই। —তুমি এখনও অাছ যে ? —আমি আর কোথায় যাব ? ফ্যামিলি পাঠিয়ে দিয়েছি বীরভূম—মামাশ্বশুর-বাড়ী । ক্ষেত্রবাবু বাসায় ঢুকিলেন। অনিল বলিল, কী হল গো । যন্ধুবাবু কী বললে ? —বলবে আর কী ! সব একই অবস্থা । সেও ভাবছে কোথায় যাবে—জায়গা নাই— —গয়া যাবে ? - —যাব কি, ই. আই. আর-এর গাড়ীতে নাকি যাওয়ার উপায় নেই। —তবে কী করবে ? স্কুল তো এখনও বন্ধ হল না ! —বন্ধ হলে কী হবে ? আমার ছুটির মধ্যে ডিউটি পড়েছে—আমার যাবার জো নেই— অনিল স্বামীর হাত ধরিয়া মিনতির স্বরে বলিল, ওগো, আমার মুখের দিকে চেয়ে তুমি চাকরি ছেড়ে দাও। এই বোমার হিড়িকে তোমাকে এখানে ফেলে রেখে আমার কোথাও গিয়ে শান্তি হবে না। ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে চাইতে হবে লক্ষ্মীটি, শুধু তোমার-আমার কথা ভাবলে হবে না। ক্ষেত্রবাবুর মনে হইল, র্তাহার মাথার উপরে ভীষণ বিপদ সমাগত। স্ত্রীর গলার স্বরে, নিজের মুখের কথায় যেন কোন মহা ট্রাজেডির ইঙ্গিত দিতেছে, সে ট্রাজেডির বেড়াজাল এড়াইয়া কোথাও পলাইবার পথ নাই।