পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুবর্তন - যন্ধুবাবুর বুকের ভিতরটা ছ্যাত করিয়া উঠিল। এই জ্যোতিবিনোদের মত সামান্য দরের লোকে যদি চাকরি ছাড়িয়া দিবার মত মরীয়া হইয়া উঠিতে পারে, তবে বিপদ কত বেশী ! কে একজন বলিল, ক্ষেত্রদার হোমিওপ্যাথিটা যা হোক চলছিল— —আর হোমিওপ্যাথি ভায় ! পাড়ায় নেই লোক, ডাক্তারি করতাম একটু-আধটু অবসরমত, তাও গেল—পাড়া খালি । যদুবাৰু হঠাৎ হেন শীতকালেও ঘামিয় উঠতে লাগিলেন। শ্ৰীশবাবু, শরৎবাৰু, গেম্মাস্টার বিনোদবাবু, হেডপণ্ডিত, সবাই আজ উপস্থিত। বড়দিনের ছুটি হইয়া যাইতেছে—তাহার উপর এই গোলমাল। কী হইবে কে জানে ? একটু ভাল করিয়া খাওয়া-দাওয়া করিয়া লওয়া যাক। ইহাদের ভাল খাওয়ার দৌড়—চার পয়সা হইতে ছয় পয়সা বা আট পয়সা। একখানা টোস্টের জায়গায় দুইখাৱা টোস্ট। তাহাই সকলে আমোদ করিয়া খাইলেন। ইহারা অল্পেই সন্তুষ্ট, অভাবের মধ্যে সারা জীবন এবং যৌবনের প্রথম অংশ অতিবাহিত করিয়া সংযম ও মিতব্যয়ে অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছেন। ইহাদের মধ্যে জগদীশ জ্যোতিবিনোদ অমিতব্যয়িতার প্রথম উদাহরণ দেখাইয়া বলিল, ওহে দোকানদার, যদুবাবুকে আরও একখানা কেক দাও, শ্ৰীশবাবুকে একখানা টোস্ট দাও, বিনোদকে— যদুবাবু একগাল হাসিয়া বলিলেন, আমাদের জ্যোতিৰ্ব্বিনোদের হার্টট যাই বল বেশ ভাল । —আর দাদা, হার্ট ! এবার কলকাতা থেকে চলে যাচ্ছি। বোধ হয় এই শেষ দেখা— চাকরি আর করব না— —কেন, কেন ? —লাড়ীর সকলে বলছে, প্রাণ বঁাচলে অনেক চাকরি মিলবে—চলে এস বাড়ী। যদুবাবু কথাটা এই কিছুক্ষণ অাগেই একবার শুনিয়াছেন ইহার মুখ হইতে, তবুও আর একবার জিজ্ঞাসা করিয়া শুনিয়া বিপদের গুরুত্বটা ভাল করিয়া যেন বুঝিতে চাহিলেন। ক্ষেত্রবাবুকে বলিলেন, তারপর ক্ষেত্র ভায়া, ব্যাপার কী দাড়াল বল তো ? সত্যি কি কলকাতা ছেড়ে যেতে হবে ? ক্ষেত্রবাবুও ঠিক এই কথাই ভাবিতেছেন। চা খাইভে থাইতে এইমাত্র ভাবিতেছিলেন, আস সিড়ি যাওয়া ভাল, ন, গাঁর দিকে—শ্বশুরবাড়ীতে ? যদুবাবুর কথায় যেন একটু বিস্থিত হইলেন। ভয়ানক বিপদ নিশ্চয় সম্মুখে, নতুবা ঘহুদার মনেও ঠিক একই সময়ে সেই একই কথা উঠিল কেন ? বলিলেন, তা যেতে হবে বইকি। সবাই যখন পালাল— গেম্মাস্টার বলিগেন, আমার এক বন্ধুর বাড়ীতে রেডিও আছে। টােকিও থেকে মুকি বলেছে, সাতাশে তারিখে কলকাতায় নিশ্চয়ই বোমা ফেলবে— যন্থবাৰু সভয়ে বলিয়া উঠিলেন,