পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শোধ করব, জানুয়ারী মাসের মাইনে থেকে— চাহিবায় ভাষা অবশু ইহাই। আড়তদার সীতানাথবাবু স্কুল-মাস্টার নহেন, লোক চরাইয়া খান। টাকা ধার লইলে কেহ স্বেচ্ছায় শোধ দিয়া যায় বাড়ী বহিয়, ইহা বিশ্বাস করেন না। বছবাৰুর সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠতাও তাহার নাই, এ অবস্থায় যন্ধুবাবু একেবারে কুড়ি টাকা ধার চাওয়াতে কিঞ্চিং বিস্থিতও হইয়াছিলেন । বেশ অমায়িকভাবে হাসিয়া, কথার সঙ্গে কিছুমাত্র ভালপালা না জুড়িয়া যথেষ্ট ভদ্রতা ও বিনয়ের সহিত বলিলেন, টাকা হবে না। এসময়লয়— যত্নবাৰু আর কোন কথা বলিতে পারিলেন না। সীতানাথবাবুর গলার স্বরে হৃদ্যত বা আত্মীয়তার লেশমাত্র নাই। চাচাছোলা কেতাদুরস্ত ভাবের ভঞ্জতার স্বর। শুনিলে ভয় হয়, দ্বিতীয় বার আর যাচ এণ করা চলে না। তবুও প্রাণেব দায় বড় দায়-কাল সকালে তিনি কলিকাতা হইতে নিষ্ক্রাস্তহইবেনই, যে দিকে দুই চোখ যায়, এখানে লজ্জা করিলে চলিবে না। স্বতরাং আবার বলিলেন, তা দেখুন সীতানাথবাবু, একটু দেখুন। হয়ে যাবে এখন। আমার বড় দরকার। কলকাতা থেকে চলে যাবার উপায় নেই, অামাকে একটু সাহায্য করুন— —হবে না। পারব না। মাপ করুন— সীতানাখবাৰু হাতজোড় করিলেন এমন ভঙ্গিতে, যেন তিনি বিশেষ কোন অপরাধ করিয়া ফেলিয়াছেন যন্ধুবাবুর কাছে। তবুও যন্থবাৰু আবার বলিলেন, তবে না হয় আমায় পনেরোটা কি দশট টাকা দিন—যা পারেন—আমি যে বড় টানাটানিতে পড়েছি কিনা-জাহয়ারী মাসের মাইনে পেলেই— সীতানাথবাবু কী ভাবিয়া বলিলেন, পাঁচটা নিয়ে যান, এসেছেন যখন। ও গোপাল, ক্যাশ থেকে পাচটা টাকা দাও তো ! ওদিকে একজনরুদ্ধলোক বসিয়াখাতাপত্র লিখিতেছিল, সে বলিল, খাতায় কী লিখব বাৰু। —আমার নিজ নামে হাওলাতে লিখে রাখ। এই নিন—আসুন। যত্নবাবু নমস্কার করিয়া সীতানাথবাবুর আড়ত হইতে নিষ্ক্রাস্ত হইলেন। খামবাজারের মোড় পৰ্য্যস্ত আর আসিতে পারেন না, রাস্ত পার হইতে পারেন না, ঘুটঘুটে অন্ধকার। ওখান কী আসে—রিকৃশ, না, মোটর ? আলো চলিয়া আসিতেছে—অন্ধকারের মধ্যে কত জোরে আসিতেছে বোঝা যায় না, ঘাড়ে পড়িবে নাকি ? বাড়ী আসিলেন তখন দশটা-রাত্রি। যন্ধুবাবুর স্ত্রী বলিল, এলে? আঁমি ভেবে মরি, এত রাত পর্যস্ত এই অন্ধকারে— —শোন, বিছানা-বাক্স গুছিয়ে নাও—কাল সকালের ট্রেনেই বেরুতে হবে আর নয় এখানে— যদুবাৰুর স্ত্রী অবাক হইয়া যন্ধুবাবুর মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, সে কী গো ! বাবে কোথায় একটা ঠিক কর আগে। -জত ঠিক করার সময় নেই। চল, বেড়াবাড়ী যাই।