পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুবর্তন বহুবাবুর ঐ শিহরিয়া উঠিয়া বলিল, ওগো, তুমি মাপ কর। সেখানে আমি খাব না। যন্থবাৰু মুখ খি'চাইয়া বলিলেন, তবে মর গে যাও—যাবে কোথায়। দাড়াবার জায়গা আছে কোথায় জিগ্যেস করি । এখানে মর বোমা খেয়ে । —তা সেও ভাল। অবনী ঠাকুরপোর বউ আর মায়ের খিটিং খিটিং দাতের বাড়ি জামার সঙ্ক হবে না। তার চেয়ে মরি বোমা খেয়েই মরি। —তবে মর, যা হয় কর । আমি কিছু জানি নে— —তুমি যাও না নিজে। রেখে যাও আমায় এখানে— আহারাদি করিয়া যদুবাবু মাথায় হাতৃ দিয়া ভাবিতে লাগিলেন। বেড়াবাড়ী দিন। যাওয়া যায়, তবে কোথায় গিয়া উঠিবেন ? দিদির বাড়ী ? হুগলী জেলার যে পত্নীগ্রামে র্তাহার দিদির বাড়ী, ভগ্নীপতির মৃত্যুর পরে বহুদিন কেন, বহুকাল সেখানে যাওয়া হয় নাই। বাড়ীম্বরের কী আছে না আছে, তিনি জানেনও না। সেইখানেই অগত্য মাইতে হয়। মোটের উপর যেখানে হয়, কাল সকালেই পলাইতে হয়। ভাবিবার সময় নাই। একবার কী একটা শব্দ হইল, যদুবাৰু চমকিয় দাড়াইয়া উঠিলেন। এরোপ্লেনের শা, সাইরেন বাজিল নাকি ? Coth—e—e—e— ক্রমশ শব্দটা মাথার উপরে আসিতেছে। বহুবাবুর প্লীহা চমকাইয়া গেল। জাপানী প্লেন যে নয়, তাহ কে বলিল ? যত্নবাৰুর স্ত্রী বলিল, এই দেখ একখানা উড়ো জাহাজ আলো জালিয়ে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । যদুবাৰু তাড়াতাড়ি বলিলেন চুপ, চুপ, হারিকেনটা ঘরের মধ্যে নিয়ে যাও—ম্বরের মধ্যে নিয়ে যাও—বোমা ! বোমা ! জাপানী বোমা । আবার সেই রক্তাক্ত জবাইখানার দৃপ্ত র্তাহার চক্ষুর সম্মুখে স্পষ্ট হইয়া উঠিল—রক্ত, চুল, স্বস্থি, মাংস। স্ত্রীকে বলিলেন, বেঁধে নাও, বিছান-টিছানা বেঁধে ফেল-কটা বেজেছে দেখ তো, ওখানেই যাব ঠিক করলাম। মঙ্গলাদের দেশে। আজ রাতটা কি কোন রকমে কাটিবে না ? সকাল হইতে ন হইতে যন্ধুবাবু ঘোড়ার গাড়ীর আডডায় গাড়ী ভাড়া করিতে গেলেন । হাওড়া স্টেশনে যাইতে কেহ স্থাকিল তিন টাকা, কেহ স্থাকিল সাড়ে তিন টাকা। একজন বলিল, হাওড়া পুল বদ্ধ হয়ে গিয়েছে বাৰু, কোন গাড়ী যেতে দিচ্ছে না— বছবাৰু চমকিয়া উঠিয়া বলিলেন, কে বললে । —হামরা সব জানি বাবু। ছুইখানা রিকৃশ, ন ন করিয়া যাইতেছিল। তাহাদের খামাইয়া, বারে আনায় রিকশা ঠিক করিয়া তাহাদের বাসার সামনে আনিলেন। তখনও ভাল করিয়া ভোর হয়ন্নাই। যদি হাওড়ায় পুল বন্ধ থাকে, বালি ব্রিজ হইয়া রিকশা খুরাইয়া লইবেন—ৰত টাকা লাগে।