পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

XSa বিভূতি-রচনাবলী মাসে পাঠায়—তার মধ্যে ঘর ভাড়া, তার মধ্যে খাওয়া । পয়সা পাই কোথায় ? –দীক্ষা না নিলে কাণীবাসে ফল কি মা ? —ফলের জন্তে তে আসিনি,শরীরডা সারাতি এসেছিলাম । মীরজ রাগের স্বরে বল্লেন—শরীর আগে না পরকাল আগে ? দ্রব ঠাকরুণ চুপ করে রইলেন। গুরুদেব বলেন—মীরজা-মার কথার উত্তর দাও—চুপ করে থাকলে হবে না। নীরজা বলেন -গীতার ভক্তিযোগ সেদিন পড়ছিলাম, শুনলে তো দিদি ? কৰ্ম্মের চেয়েও ভক্তি বড়, স্বয়ং ভগবান বলচেন— 飘 আঃ কি বিপদ! মাগীর সব সময়েই কি আবোল-তাবোল বকুনি ? মুখে বল্লেন -আমি তো কিছু বুঝি নে, আপনার যা বলেন। তৰে এবার কিছু হবে না। নাতি সাতটাক পাঠিয়েছিল, তা ঘর ভাড়াতেই গিয়েচে । হাতে টাকা না থাকলি— তৰুও দু’জনই নাছোড়বান্দা । দীক্ষা নিতেই হবে। গুরুদেব বল্পেন—কাশীবাস করচো মা, তোমার যথেষ্ট বয়েস হয়েচে । গুরুদীক্ষা না নিলে যে সবই মাটি। আজ আছ, কাল নেই। পৃথিবী কিছুই না-ইহকাল কিছুই না— নীরজা বল্পেন—গুরুর মুখেই ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। ইহকালেও তিনি, পরকালেও তিনি— জব ঠাকরুণ মনে মনে বল্পেন-অা মরণ মাগীর । তবে সোয়ামী কোথায় যাবে মেয়েদের ! ঢং দ্যাখে না –! যাই হ’ক, বহু তর্ক করেও ঠাকরুণকে দ্রব করা গেল না। নাম দ্রবময়ী হ’লে কি হবে, ভেতরে বেজায় শক্ত। নীরজা অবিপ্তি র্তার জ্ঞান বুদ্ধি মতে একজন সত্তর বছরের মৃত্যুপথযাত্রিণীর ভালো করবারই যথেষ্ট চেষ্টা করছিলেন, সে রাজী না হ’লে তিনি আর কি করবেন ? নীরজার ভক্তি—হঁ্যা, সে দেখবার মত একটা জিনিস বটে। গুরুর পাদোদক পান না করে তিনি দাতে তৃণ কাটবেন না। গুরুর বাক্য বেদবাক্যের চেয়েও মূল্যবান তার কাছে। পুরোনো একছড়া সোনার হার ছিল; সেটা বিক্রি করে এসে টাকা তুলে দিলেন গুরুদেবের হাতে । কথাটা শুনে দ্রব ঠাকরুণ জিজ্ঞেস করলেন—অতগুলো টাকা দিয়ে দিলে গুরুদেবকে ? —টাকা সার্থক হ’ল, দিদি– —তোমার নিজের হার ? —ও আমার বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ী থেকে দিয়েছিল—তিনি হাতে করে দিয়েছিলেন— —সেই হার তুমি দিয়ে দিলে বেচে । --দিদি, সংসার অনিত্য, সবই অনিত্য। কে কার স্বামী, কে কার স্ত্রী ? সবই ভগবামের মায়া। মায়ায় সব ভুলে থাকা—গুরই কেবল নিত্য বস্তু— --তা তো বটে।