পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত సిసి কাঁচা পয়সা কৃষ্ণলালের হাতে। প্রতিদিনের আয় তিন টাকা, আড়াই টাকার নীচে নয়। একদিন গোলাপীর মা অভিমানের স্বরে বলিল—যাই বলে বাপু, গোলাপী আমায় প্রায়ই বলে, একথানা বাড়ী তার নিজের না হ’লে চলে না আর -তা তেমন কপাল কি— এই এক বাড়ীতে ছত্রিশ জনার সঙ্গে— —কেন মা ? তার ভাবনা কি ? কালই ঘর দেখে দিচ্চি— —কত টাকা ভাড়ার মধ্যে হবে বলো—এই আমাদের পাড়াতেই আছে-- —যা তুমি বলবে। কুড়ি কি পচিশ— —ত্রিশ টাকায় একখানা ভালো বাড়ী এ পাড়াতেই আছে—তাহলে তাই না হয়-- —হ্য হ্যা—এ আবার আমায় জিজ্ঞেস করতে হয় মা ? গোলাপীরা নতুন বাড়ীতে উঠিয়া আসিল । বড় পাচী বলিল—ওলো, একটু রয়ে সয়ে নিস–দেখিস যেন আবার দড়ি না ছেড়ে—খুব বরাত তোর যাহোক গোলাপী। আর আমাদের ওই বুড়ে রায় বাবু রোজ আসেন আর বাধানে দাত জলের গেলাসে খুলে রাখেন —ক’দিন বল্লাম একখান ঢাকাই শাড়ী, আর একটা বাজা-ঘড়ি দাও দেওয়ালে টাঙানোর, তা বুড়ো মড়া আজ সাতমাস ঘুরুচ্চে—আজ এলে হয় একবার—ওর দাত খুলে জলের গেলাসে ডুবিয়ে রাখা বের করে দেবো— শুধু বাড়া ? গোলাপীর টেবিল-হারমোনিয়ম হইল, জোড়া জোড়া শাড়ী, চেয়ার, এমন কি শেষে কলের গান পৰ্য্যস্ত। কোন মুখ গোলাপীর বাকি ছিল ? প্রতি রবিবারে কৃষ্ণলালের সঙ্গে গাড়ী করিয়া ( অবশ্য ঘোড়ার গাড়ী) কালিঘাটে গঙ্গাস্নান ও দেবীদর্শন করিতে যাওয়৷ তাহার অভ্যাসের মধ্যে দাড়াইয়া গিয়াছিল । বছরের পর বছর কাটিয়া গেল। গোলাপী আর কৃষ্ণলাল, কৃষ্ণলাল আর গোলাপী । ইতিমধ্যে গোলাপীকে স্বখে-স্বচ্ছন্দে প্রতিষ্ঠিত দেখিয় তাহার মা একদিন নবীন কুণ্ডু লেনের মায়া কাটাইয়া বোধ হয় উৰ্ব্বশী বা তিলোত্তমা-লোকে প্রস্থান করিল। অমন জাকের শ্রাদ্ধ এ অঞ্চলে কেহ দেখে নাই তার আগে। . * ক্রমে ক্রমে গোলাপীর যৌবনে ভাটা পড়িল। কৃষ্ণলালেরও আয়ের অঙ্ক কমিতে লাগিল । দত্তপুকুরের তেলের অনুকরণে শত শত বাতের তেল বাজারে বাহির হইল—রেলগাড়ীর কামরাও নিত্যনূতন ক্যানভাসারে ভরিয়া গেল। যা ছিল কৃষ্ণলালের একার—তাহার মধ্যে অনেক ভাগ বসিল । পূর্বের সচ্ছলতা কমিতে লাগিল । তারপর দশ বারো বছর কাটিয়া গিয়াছে। এই দশ বারো বছরে সুন্দরী গোলাপী কুরূপী প্রৌঢ়াতে পরিবত্তিত হইয়াছে—তাহার সে বাড়ী চলিয়া গিয়া আবার সাত আটটি নানা বয়সের সঙ্গিনীর সঙ্গে বাড়ীটিতে থাকিতে হয়তৰুও কৃষ্ণলালের যাহা কিছু উপার্জন, এইখানেই তাহার সদ্ব্যয়। গোলাপীও তাহা বোঝে-- এই ত্রিশ বছরের মধ্যে সে কৃষ্ণলালকে ছাড়িয়া অঙ্ক কোথাও যায় নাই ।