পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধুতি, পায়ে চটি জুতা । নারাণবাবু পকেট হইতে একটি টিনের কৌটী বাহির করিয়া একটি বিড়ি ধরাইলেন। ক্ষেত্রবাৰু হাত বাড়াইয়া বলিলেন, দিন একটা, কাঠিটা ফেলবেন না। নারণবাবু বলিলন, কী হয়েছে, আজ যদুবাবুকে হেডমাস্টার ডাকিয়েচে কেন ? যদুবাৰু চড়াগলায় মেজাজ দেখানোর স্বরে বলিতে আরম্ভ করিলেন, সেই কথাই তো বলচি। শুধু শুধু ওই অস্ত্যজট। আমায় ডেকে নিয়ে গিয়ে— নারাণবাবু বলিলেন, আস্তে, আত্তে— - যদুবাৰু গল! আবও এক পর্দ চড়াইয়। বলিলেন, কেন, কিসের ভয় ? যদু মুখুজে ওসব গ্ৰাহি করে না । অনেক অালম দেখে এসেছি, থার্ড ক্লাস এম-এ—তার আবার প্রতাপট কিসের হ্যা? কেবল লাগানো-ভাঙানো সব সময়! অ’ লাগানোর ধার ধারে কে ? উনি ভাবেন, সবাই ওঁকে ভয় করে চলবে । যে চলে সে চলুক, যদু মুখুজে সে রকম বংশের— বাহিরে বুট জুতার শব্দ শোনা গেল—মি: আলমের পায়ে বুট আছে সবাই জানে— যন্থবাৰু হঠাৎ থামিয়া গেলেন। ক্ষেত্রবাবু বলিয়া উঠলেন, যাই, খড়িটা দিন নারাণবাৰু দয়া করে, ক্লাস আছে | নারাণবাৰু বলিলেন, চল, আমিও যাই। ওরে কেবলরাম, ইণ্ডিয়ার বড় ম্যাপখান দে তো— - কিন্তু দেখা গেল, যে ঘরে ঢুকিল সে মিঃ আলম নয়, বইয়ের দোকানের একজন ক্যানভাসার—এক হাতে বাগ ঝোলানো, অন্য হাতে কিছু নতুন স্কুল-পাঠ্য বই। ক্যানভাসারের স্বপরিচিত মূত্তি। ক্যানভাসারের প্রশ্নের উত্তরে তাহাকে হেডমাস্টারের আপিল দেখাইয়া দিয়া যদুবাৰু পুনরায় শুরু করিলেন, হ্যা, আমি যা বলব এক কথা। কাউকে ভয় করে না এই যদু মুখুজে । বলি বাবা, এ স্কুল গড়ে তুলেছে কে ? ওই নারাণ বাড়ুজ্জে আর হেডপত্তিত। সাহেব এল তো কাল, উড়ে এসে জুড়ে বসেচে—আর ওই অস্ত্যজ— মি: আলমের প্রবেশটা একটু অপ্রত্যাশিত ধরনে ঘটিল। যদুবাৰু হঠাৎ ঢোক গিলিয়া চুপ করিয়া গেলেন। মি: আলমের ব্যবহার অত্যন্ত ভদ্র ও সংযত। মূখের উপর কেহ গালাগালি দিলেও মি: আলমের কথাবাৰ্ত্ত বা ব্যবহারে কখনও রাগ প্রকাশ পায় না। আলম বলিল, ক্ষেত্রবাবুর একটা দরখাস্ত দেখলাম হেডমাস্টারের টেবিলে, কাল আসবেন না। কী কাজ ? ক্ষেত্রবাৰু বললেন, আজ্ঞে, কাল আমার ভাগ্নীর বিয়ে— —তা একদিন কেন, দুদিন ছুটি নিন না । আমি সাহেবকে বলে দেব এখন। ক্ষে বাৰু বিনয়ে গলিয়া গিয়া বলিলেন, যে আঞ্জে। তাই দেবেন বলে। আমার কুবিধে হয় তা হলে—থ্যাঙ্কস । —নে মেশিন।