পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত ২১৭ সে অনেক পরতে পারবে ; জাতমান খুইয়ে বৃন্দাবনী কেন, বেনারসী পরবার শখও তার নেই। এই ঘটনার কিছুদিন পরে তুলসী দারোগা এখান থেকে বদলি হয়ে চলে যায়। আর একজন লোক কিন্তু কথঞ্চিৎ সাফল্য লাভ করেছিল অন্যভাবে। গ্রামের প্রাস্তে গোসাইপাড়া, গ্রামের মধ্যে তারা খুব অবস্থাপন্ন গৃহস্থ, প্রার জমিদার। বড় গোসাইয়ের ছেলে রতিকান্ত নদীর ধারে বন্দুক নিয়ে শিকার করতে গিয়েছিল—সন্ধ্যার প্রাক্কালে, শীতকাল। হঠাৎ সে দেখলে কাদের একটি বেী ঘড়াস্থদ্ধ পা পিছলে পড়ে গেল—খুব সম্ভব তাকে দেখে । রতিকান্ত কলকাতায় থাকতো, দেশের ঝি-বেী সে চেনে না । সে ছুটে গিয়ে ঘড়াটা আগে হাটুর ওপর থেকে সরিয়ে নিলে, কিন্তু অপরিচিতা বধূর অঙ্গ স্পর্শ করলে না। একটু পরেই সে দেখলে বধুটি মাটি থেকে উঠতে পারছে না, বোধহয় ইটুি মচকে গিয়ে থাকবে। নির্জন বনপথ, কেউ কোনদিকে নেই, সে একটু বিব্রত হয়ে পড়লো। কাছে দাড়িয়ে বল্লে—ম, উঠতে পারবে, না হাত ধরে তুলবো ? তারপর সে অপরিচিতার অনুমতির অপেক্ষ না করেই তার কোমল হাতখানি ধরে বল্পে —ওঠ মা আমার ওপর ভর দিয়ে । কোন লজা নেই—উঠে দাড়াবার চেষ্টা করে তো— কুষ্ঠিত সঙ্কুচিতা বধু ছিল না নিস্তারিণী। সে ছিল যুগীপাড়ার বেী—তাকে এক ঘাট থেকে জল আনতে হয়, ধান ভানতে হয়, ক্ষার কাচতে হয়—সংসারের কাজকৰ্ম্মে সে অনলস, অক্লাস্ত । যেমনি পরিশ্রম করতে পারে, তেমনি মুখরা, তেমনি সাহসিকাও বটে। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্ঘ্যের গৌরবে তখন তার নবীন বয়সের নবীন চোখ দুটি জগৎকে অন্য দৃষ্টিতে দেখে । সে উঠে দাড়ালো, রতিকাস্তের সঙ্গে কিন্তু কোনো কথা বল্পে না। বুঝতে পারলে গোসাইপাড়ার বাবুদের ছেলে তার সাহায্যকারী। বাড়ী গিয়ে দু-তিন দিন পরে সে স্বামীকে দিয়ে একছড়া স্বপক চাপাকলা ও নিজের হাতের তৈরী বঁাশশলা ধানের খইয়ের মুড়কী পাঠিয়ে দিলে গোসাইবাড়ী। বল্লে—আমার ছেলেকে দিয়ে এসো গে— নিস্তারিণী সেই থেকে সেই একদিনের দেখা স্বদর্শন যুবকটিকে কত কি উপহার পাঠিয়ে দিত। রতিকাস্তের সঙ্গে আর কিন্তু কোনদিন তার সাক্ষাৎ হয় নি। গোসাই-বাড়ীর ছেলে যুগী-বাড়ীতে কোনো প্রয়োজনে কোনদিন আসে নি। রতিকান্ত কলকাতাতেই মারা গিয়েছিল অনেকদিন পরে। নিস্তারিণীর দুতিন-দিম ধরে চোখের জল থামেনি, এ সংবাদ যখন সে প্রথম শুনলে । গ্রামের অবস্থা তখন ছিল অন্যরকম। সকলের বাড়ীতে গোলাভরা ধান, গোয়ালে দু-তিনটি গোরু থাকতো। সব জিনিস ছিল সস্তা। নিস্তারিণীদের বাড়ীর পশ্চিম উঠানে ছোট একটা ধানের গোলা । কোন কিছুর অভাব ছিল না ঘরে । বরং ব্রাহ্মণ-পাড়ার অনেককে সে সাহায্য করেছে । একবার বড় বর্ধার দিনে সে বাড়ীর পিছনের আমতলায় ওল তুলচে—এমন সময় বাড়ুৰ্যেবাড়ীর মেয়ে ক্ষান্তমণি এসে বল্লে— —ও যুগী-বো ?