পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१२ বিভূতি-রচনাবলী দূর দূরাস্তরের চাষাগায়ে হাসের ডিম, মুরগীর ডিম সংগ্রহ করতে যায় ব্রাহ্মণপাড়ায় বিক্রির জন্তে | - নিৰ্ম্মলা নিজেও বসে থাকে না, তিস্থ গাজুলীর বাড়ী বিয়ের কাজ ক’রে মাসে দু'টাকা মাইনে পায় ! -- স্বতরাং এ সংসারে এখন নিৰ্ম্মলার প্রতিপত্তিই বেশি। নিস্তারিণীর দিন সকল রকমেই চলে গিয়েচে । এখন নিৰ্ম্মলার ছেলে বলাই পয়সা আনে, নিৰ্ম্মলা নিজে পয়সা আনে, বলাইয়ের পয়সায় ওর ঠাকুরমা দুধের যোগান দিয়ে কিছু আয় করে। নিস্তারিণী শীর্ণ পাণ্ডুর দেহে উত্থানশক্তিরহিত শয্যাগত অবস্থায়ু শুধু খাই খাই করে রোগের দুষ্টঙ্কুধায় অবোধ বালিকার মত। হরি যুগী বেঁচে থাকলে তার সে অষ্ঠায় আবদার খাটতো, সাধন বেঁচে থাকলেও খাটতো। আজ তার আবদার কান পেতে শোনবার লোক কে আছে এ সংসারে । so নিৰ্ম্মলার বয়স পয়ত্রিশ ছত্রিশ–বেশ ধপধপে ফর্সা, কৃশাঙ্গী, মুখচোখ ভালোই, মাথায় এখনো একটাল চুল, চুলে একটিও পাক ধরে নি। যুগীদের মেয়ের সাধারণত সুন্দরী হয়ে থাকে-নিৰ্ম্মলার মেয়ে তারা বেশ স্বন্দরী। তারা বলাইয়ের ছোটাে, এই মাত্র চোদ্ধ বছর বয়েস। আজ বছর দুই হ’ল এই গ্রামেই তার বিয়ে হয়েচে । নিৰ্ম্মল! এসে বল্লে—দিদি, টেচিও না। ঝগড়া করে মরচে কেন ? নিস্তারিণী কাদতে কাদতে বল্লে—াক দিকি ছোট বো, আমায় কিনা রাফুসি, ডাইনি বলে। আমি নাকি এসে ওনার সংসারে আগুন নাগিয়ে দিইচি । আমার সোয়ামী পুত্তরের অন্ন উনি কোনো দিন বুঝি দাতে কাটেন নি— নিৰ্ম্মলা বল্লে—সে তো তুমিও ওনাকে বলেচে । যাক, এখন চুপটি ক'রে শুয়ে থাকে। —ও ছোট বেী, আমি দুটো ভাত— —না, আজ না। তোমার গা ফুলেচে, মুখ ফুলেচে—তুমি ভাত খাবে কি বলে আজ } : —ত হোক, তোর পায়ে পড়ি— —আচ্ছা এখন চুপ করে, বেলা হোক! ভাত রান্না হোক, আমি বলবো তখন। নিস্তারিণীর হাত, পা, মুখ ফুলেচে একথা ঠিকই। বিশ্ৰী চেহারা হয়ে গিয়েচে একথা ঠিকই। কি বিত্র চেহারা হয়ে গিয়েচে তার, ওর দিকে যেন আর তাকানো যায় না—এমন খারাপ দেখতে হয়েচে ও । যত্ন করবার কেউ না থাকাতে আরও দিন দিন ওর অবস্থা খারাপতর হয়ে উঠেচে। খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু আগ্রহঁ ক’রে খেতে দেবার কেউ নেই। রোগীর পথ্য তো দূরের কথা, দুটি ভাত তাই কেউ দেয় না। ক্ষুধার জাল সহ করতে না পেরে বেলা দশটা আন্দাজ সময়ে সে নাতিকে ডেকে চুপি চুপি বল্লে—পিনটু, ছুটে পেয়ারা আনতে পারিস ? - পিনটুর মা ছেলেকে বলে—খবরদার, যাবি নি বুড়ীর কাছে। ওর পাণ্ডুর রোগ হয়েচে, ছোয়াচে রোগ। ছেলে খেয়ে বসে আছে ডাইনি, আবার নাতিকে খাবার যোগাড় করচে।