পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঠাকুরদার গল্প অনেক দিন আগের কথা । একালে সে জিনিস শুনলে ভাববে গল্পকথা বুঝি, কিন্তু সেকালে দেশের সামাজিক অবস্থা ছিল অন্যরকম, তখন ওরকম সম্ভব ছিল। যাক আসল গল্পট বলি : - আমার তখন বয়স কুড়ি-একুশ–একহার চেহারা, মাথায় বাবরি চুল, গায়ে যথেষ্ট শক্তি রাখি। খেতেও পারি খুব । ভোজসভার নাম-করা খাইয়ে ছিলেন সেকালের আমার পিতামহ তোমাদের বৃদ্ধপ্রপিতামহ ভবিষ্ণুরাম রায়, স্বারসার জমিদারবাড়ীতে দুর্গোৎসবের নিমন্ত্রণে পুরো খাওয়ার পর এক হাড়ি রসগোল্লা খেয়ে ধুতি চাদর আদায় করে এনেছিলেন। সকলে বলতে নিমাই বংশের নাম রাখবে। তার ডাকনাম ছিল নিমাই । আষাঢ় মাসের শেষ, ঘোর বর্ষ সেবার। বাবা তার আগের বছর মারা গিয়েছেন স্বতরাং বাইশ বিঘে ব্রহ্মোত্তর আমন ধানের জমিতে ধান রোয়ার ভার পড়লে আমার ঘাড়ে । বড়দাদা কুসঙ্গে মিশে অল্পবয়সে গাজা ধরেছিলেন, পাড়াগায়ে যা হয়ে থাকে, গাজা খাওয়ার দলে তারই সমবয়সী লোক ছিল অনেক, তারা কুপরামর্শ দিয়ে আমাদের পৈতৃক জমি ফাকি দিয়ে মৌরসী নেবার চেষ্টা করলে । একদিন দাদা এসে বল্পেন—খালপারের জমিট মৌরসী চাইচে একজন, বেশ মোট সেলামী ! দিবি ? আমি দাদার নির্ব দ্ধিতা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমার চেয়ে বয়সে বড়–অথচ তার বুদ্ধি এরকম। কে এমন স্বপরামর্শ দিয়েছে কি জানি । বল্লাম—কত সেলামী দিচ্ছে ? —পনেরো টাকা বিধে । —জমিগুলো কিন্তু চিরদিনের মত হাত-ছাড়া হয়ে যাবে । —তাতে কি ? এখন সত্তর আশি টাকা হাতে আসবে— —আমার ওতে মত নেই দাদা। এই থেকেই দাদার সঙ্গে আমার মতভেদ হয়ে গেল। তিনি আর আমার সঙ্গে কথা বলেন না, মার সঙ্গে বলেন, তার অংশের জমি তিনি আলাদা করে নেবেন, নিজের জমি যা খুশী করবেন, এতে কার, কি ৰলবার আছে—ইত্যাদি । আমরা চাষীবাসী গৃহস্থ । . ধান ছাড়া অন্য আয় নেই, জমি ছাড়া অন্য সম্পত্তি নেই। আষাঢ় মাস এল, ধান রোয়ার সময়। দাদা কিন্তু জমির দিকে একবারও গেলেন না, এক পয়সার সাহায্যও করলেন না। আমি ভেবে চিন্তে মুস্তফাপুরের কাজী সাহেবদের বাড়ী গিয়ে হাজির হোলাম । মুস্তফাপুরের কাজীরা বেশ অবস্থাপন্ন, তবে বুড়ে কাজী সাহেব শুনেছিলাম খুব রুক্ষ মেজাজের মাহুষ—কিন্তু আমার তখন আর কোনো উপায় ছিল না। ৮ কাজী সাহেবের বাড়ী বেশ দোমহল কোঠা, বাইরে লম্বা বৈঠকখানা। কাজী আবদুর রহমান বসে ই কোয় তামাক খাচ্ছিলেন। আমায় দেখে বল্পেন—কোথা থেকে আসা হচ্চে ?