পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৮ বিভূতি-রচনাবলী এই ভাবে সেই আষাঢ় মাসে ধান রোয়া আমিই নিজের চেষ্টায় শেষ করলাম । বাংলা ১২৮২ সাল। তখন সাড়ে তিন টাকায় উৎকৃষ্ট আমন চাল এক মন পাওয়া যায়, পাকি ওজনের গাওয়া ৰি এই গ্রামে বসেই বারো আনা সের কিনেচি। দুধ ষোল সের টাকায়। সে সব এখন বল্পে রূপকথা বলে মনে হবে । গ্রামে পীতাম্বর ঘোষ বলে একজন প্রজা ছিল আমাদের। গোরু কেন সম্বন্ধে তার সঙ্গে পরামর্শ করলাম। সে বল্লে—বাবাঠাকুর, গঙ্গাপারে একটা হাট আছে, সেখানে সস্তায় বলদ পাওয়া যায়। একবার আমি সেখান থেকে গোরু কিনে এনেছিলাম। চলুন সেখানে । আমিও যাবো । @ মার সম্মতি নিয়ে পীতাম্বরের সঙ্গে হাটাপথে রওনা হলাম । সঙ্গে কাজী সাহেবের দেওয়া সেই একশো টাকা। গেজের মধ্যে র্কাচ টাকা নিয়ে কোমরে বেঁধে নিয়েচি পীতাম্বরের পরামর্শে । তখনকার আমলে রাস্তাঘাটে চোরডাকাতের বিশেষ ভয় ছিল, মা পীতাম্বরকে তুলসী গাছ ছুইয়ে দিব্যি করিয়ে নিলেন সে যেন আমাকে এক রেখে পথের মধ্যে কোনো দরকারেও কোথাও না যায়। মা জানতেন না এই যাত্রার কি পরিণাম, কে-ই বা জানতো ! আজও ভেবে আশ্চৰ্য্য হয়ে যাই এমন একটা ঘটনা একদিন কি করে ঘটেছিল আমার বাইশ বৎসরের জীবনে। চাদুড়ের গঙ্গাতীর আমাদের গ্রাম থেকে সাত ক্রোশ। বেলা দুটোর সময় খেয়ায় গঙ্গাপার গেলাম। পীতাম্বর বল্পে, বাবাঠাকুর, এখান থেকে ক্রোশচারেক দূরে একখানা গ্রাম অাছে, সেখানে আমাদের স্বজাতির বাস আছে অনেক। সন্ধ্য। পর্য্যস্ত হাট তে পারবেন ? তখন আমার জোয়ান বয়েস—বল্লাম, খুব । পীতাম্বর বল্লে—তবে চলুন বাবাঠাকুর । সন্ধ্যার অন্ততঃ ঘণ্টাখানেক পরে আমরা সে গ্রামে পৌছে গেলাম। ষাট বছর আগের সে সব কথা আজ ও বেশ মনে আছে আমার । আমাকে দাড় করিয়ে রেখে পীতাম্বর বাসার সন্ধানে কোথায় চলে গেলু, আমি একটা নিমগাছের তলায় দাড়িয়েই আছি অন্ধকারে । পীতাম্বর আর ফেরে না। আধঘণ্ট। পরে দেখি পীতাম্বর এসে ডাকচে, আছেন নাকি বাবাঠাকুর r চলুন— তারপর একটা খড়ের ঘরে নিয়ে গিয়ে আমাকে তুল্পে। মনে হল সেটা কোন গৃহস্থের বাইরের চণ্ডীমণ্ডপ হবে। একপাশে কতকগুলো বিচালি, অন্যদিকে ধানের বস্তা। একটা মাদুর পর্য্যন্ত পাতা নেই মাটির মেজেতে। তার ওপর অস্পষ্ট অন্ধকার। আলো নেই। বাড়ীর লোকেরা এমন অভদ্র যে একবার খোজ পৰ্য্যন্ত নিলে না আমাদের। পীতাম্বরকে বল্লাম—দেশলাই জালি, একবার দেখে নিই সাপ-খোপ কোথাও আছে কিনা। এমন বাড়ীতেও নিয়ে এসেছ তুমি। * –বাৰু, এ রাঢ় দেশ। বড় খারাপ জায়গা। বিদেশী মানুষকে জায়গা দেয় না। এর বোধ হয় জানেও না যে আমরা বাইরের ঘরে জাছি।