পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত ২৩৯ কোনো রকমে রাত কাটিয়ে ভোর হবার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়া গেল দু'জনে । শাকমুড়ি বলে একটা ছোট বাজারে চিড়ে দুই কিনে আমরা ফলার করলাম—স্বাগের রাত্রে অনাহারে আছি, তার ওপর আমার জোয়ান বয়সের খিদে ! আধসের করে চি ড়ে আর আধসের দই, পোয়াটাক গুড় ও এক ছড়া কলা এক একজনে চক্ষের নিমেষে উড়িয়ে দিলাম । পীতাম্বরের মহৎ দোষ ছিল তামাক খেতে বসলে সে হঠাৎ উঠতো না। মুীর দোকানে আহারাস্তে তামাক খেতে বসলে তো বসলোই। এদিকে বেল পড়ে আসতে আমি একটু ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। মুর্দীর দোকানে পয়সা মিটিয়ে আমরা আবার পথ স্থাটি। বেলা যখন বেশ গড়িয়ে এসেচে, তখন উপর দিক থেকে খুব মেঘ করে এল। পীতাম্বর বল্লে—বাবাঠাকুর, আগে সিজে-ডুমুর দ’ বলে গ্রাম। অনেক বায়ুনের বাস । কিন্তু জায়গাটাতে যাবে। কিনা ভাই ভাবচি— —কেন ? —বিখ্যাত ডাকাতের জায়গা। বামুনরাই ডাকাত। গঙ্গা দিয়ে একসময় বিদেশী মাল বোঝাই নৌকো যাওয়ার উপায় ছিল না। আজকাল তেমনটা নেই—তবুও বাবাঠাকুর বিশ্বেস নেই। সঙ্গে অতগুলো টাকা । —গ্রামের মধ্যে ঢোকা ভালো বাইরের মাঠে থাকার চেয়ে । মাঠের মধ্যেও ডাকাতি করে নিতে পারে তো ? চলো কোনো ব্রাহ্মণের বাড়ী আশ্রয় নিই। —কিন্তু বাবাঠাকুর, কোনো রকমে যেন জানতে দেবেন না যে আমাদের কাছে টাকা আছে ; সিজে-ডুমুর দ’ জায়গা ভালো না । সন্ধ্যার আগে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে দু'তিনটি ব্রাহ্মণ-বাড়ী গেলাম—কিন্তু কেউ জায়গা দিল না। আমরা বাইরের রোয়াকে শুয়ে থাকতে চাইলাম-রাত্রে কিছু থাবো না বল্লাম, কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কর্ণপাত করলে না। * অবশেষে একটা দেউড়িওয়াল উচু পাচিল-তোলা পুরোনে আমলের কোঠাবাড়ীর সামনে এসে দাড়িয়ে ভাবচি, এখন কি করা যায়—একজন বৃদ্ধ হঠাৎ দরজা খুলে বাইরে এলেন । আমায় বল্লেন, কে ? to —আজে, আমাদের বাড়ী এখানে নয়। —এখানে কি মনে করে ? © —বিদেশী লোক, রাত্রে একটু থাকবার জায়গা খুঁজচি। —তোমরা ? —অাঞ্জে ব্রাহ্মণ । —কি ব্রাহ্মণ । উপাধি কি ? --রাঢ়ী শ্রেণীর ব্রাহ্মণ, উপাধি রায় ।