পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는 86 বিভূতি-রচনাবলী বৃদ্ধ একবার আমার আপাদমস্তক তীক্ষ দৃষ্টিতে চেয়ে দেখে বল্পে—এসে বাপু । সঙ্গে কেউ আছে ? তাকেও ডাকো । এভাবে আশ্রয় পেয়ে প্রথমটা খুব খুশী হয়ে উঠেছিলাম বটে কিন্তু পরে সদর দেউড়ি পার হয়ে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে সেই পুরোনো আমলের বাড়ীর চেহারা দেখে কেমন ভয় ভয় হ’ল। নির্জন বাড়ীটায় কেউ যেন কোথাও নেই—এখানে যদি এর টাকার জন্যে আমাদের খুন ক’রে পুতে রাখে, তবে লাস সনাক্ত করবার মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভেতরে গিয়ে ছ'মহল পার হয়ে তৃতীয় মহলে ঢুকে নারীকণ্ঠের স্বর শুনে একটু ভরসা হ’ল। মেয়েদের সামনে খুনটা অন্তত করতে পারবে না। চটাওঠা একটা খুব বড় রোয়াকের একপাশে বর্ষার জলে আগাছা গজিয়ে রীতিমত বন হয়েচে । আমার ভয় হ’ল ওখানে নিশ্চয়ই সাপ লুকিয়ে থাকে। সেষ্ট রোয়াকে আমাদের বসবার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে বৃদ্ধ রান্নাঘরের মধ্যে ঢুকলো । - S পীতাম্বর চাপা গলায় বল্লে—বাবাঠাকুর, এ কি-রকম জায়গা ? চলে সরে পড়ি। আমি ভরসা পেয়েচি মেয়েদের দেখে । বল্লাম—বনেদী গেরস্ত, অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েচে এখন। কোনো ভয় নেই । একটু পরে বৃদ্ধ ফিরে এসে বল্পে—তোমার সঙ্গের লোকটি কি-জাত ? গোয়ালা ? বেশ। ওকে এই পেছনের পুকুর থেকে এক ঘড়া জল আনতে হবে, তোমাদের হাত পা ধোবার জন্যে । আমার বাড়ীতে লোকের অভাব । আমি বল্লাম—যাও পীতাম্বর— পীতাম্বর দেখি আমায় চোখ টিপচে । আমি ধমক দিয়ে বল্লাম—যাও না—বসে কেন ? অগত্য সে চলে গেল। আমি একা পড়ে গেলাম অতবড় বাড়ীর মধ্যে । পীতাম্বরের সন্দেহের অর্থ বুঝিনি এমন নিৰ্ব্বোধ নই আমি। খুব সতর্ক হয়ে রইলাম—নিজের দশ হাতের মধ্যে কোনো অপরিচিত লোককে আসতে দিচ্চিনে—কাউকে বিশ্বাস নেই এখানে। প্রসিদ্ধ ডাকাতের জায়গা সিজে-ডুমুর দ’। বৃদ্ধ দেখি আবার আসচে। আমি উঠে দাড়ালাম। ওর হাতে লুকোনো সড়কি নেই তো ? উঠে দাড়ালে তবুও ছুট দিতে পারবো । বৃদ্ধ বল্পে-দাড়িয়ে কেন, বোসে বোসে। তোমাদের বাড়ী কোথায় বল্লে ? —আজ্ঞে সনাতনপুর, নদে’ জেলা । —বাপের নাম কি ? —yভূষণচন্দ্র রায় । —কি কর ? বয়স কত ? ছেলেমানুষ বলে মনে হচ্চে। বৃদ্ধ একটা আশ্চর্ষ প্রশ্নও করলে হঠাৎ ৷ বল্লে—গায়ত্রী মন্ত্র বলে তো ? ব্যাপার কি ? বৃদ্ধ পাগল টাগল নয় তো ? রাnভরটা কাটলে বাচি । কি করি, আবৃত্তি করে গেলাম গায়ত্রী। -