পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত २8७ গল্পটি শেষ করে ঠাকুরদা একবার শ্রোতাদের মুখের দিকে চাইলেন, কিন্তু কারুর মুখ দেখে বোঝা গেল না যে তার কেউ এটা বিশ্বাস করেচে। তখন তামাকের নলটায় একটা জোরে টান দিয়ে বল্লেন, আগেই তো বলেচি এটা সত্যি বলে তোমরা কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। কিন্তু জেনে, এটা সত্যি—বুড়ে বয়েসে মিথ্যা কথা বলে নাতিদের ঠকিয়ে আমার লাভ কি বলে ! ভিড় স্টেশনে আসতে দেরি হয়ে গিয়েছে, টিকিট-ঘরের দিকে চেয়ে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হবার উপক্রম হ'ল। তিনবার কুণ্ডলী খেয়ে এক বিরাট কিউ, টিকিটের জানাল থেকে এনকোয়ারি অফিস পৰ্য্যন্ত দাড়িয়ে । ঘড়ির দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে সৰ্ব্বাগ্রে চট ক’রে সেই কুণ্ডলী-পাকানো অজগর সাপের লেজের আগায় গিয়ে নিজেকে স্বপ্রতিষ্ঠিত করলাম । নইলে আরও পিছিয়ে পড়তে হবে এক্ষুনি । তিন মিনিটের মধ্যে লেজটা আরও ছ’হাত বেড়ে গেল । বহু লোক ব্যাপার দেখে টিকিটের জানালার কাছাকাছি যে সব লোক দাড়িয়ে রয়েছে ঘৰ্ম্মাক্ত কলেবরে, তাদের কাছে টাকা নিয়ে গিয়ে খোসামোদ করছে,—মশাই, আপনি তো টিকিট করছেনই, এই উলুবেড়ের দু’খানা অমনই ওই সঙ্গে— —আমার, মশাই, একখানা অমনই কোলাঘাটের— যাকে অনুনয় করা হচ্ছে সে বলছে,—ওসব হবে না । নিজের নিয়েই ব্যস্ত—না, না, কেন আপনি বকছেন মশাই ? যান, তার চেয়ে কিউতে দাড়ানো ভাল । লোককে খোশ মোদ করা ধাতে সয় না | - কিন্তু এদিকে ঘড়িতে এগারোটা বাজে। এগারোটা কুড়িতে নাগপুর প্যাসেঞ্চার ছাড়বে— কুড়ি মিনিটের মধ্যে। সন্মুখে এই বিরাট কিউ। বিশ্বাস তো হয় না। আরও দশ মিনিট কেটে গেল। কিউ যেমন তেমনই, বিশেষ কোনওঁ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন অন্তত চৰ্ম্মচক্ষে তো দৃষ্টিগোচর,হয় না, এক-একখানা টিকিট দিতে ছ'মাস লাগছে। এই রেটে আমার পালা আসতে বেলা আড়াইটে বাঙ্গবে, এগারোট কুড়িতে এর সিকির সিকিও ফুরোবে না । সঙ্গে লটবহর, মেয়েছেলে । নইলে না হয় ফিরেই যেতাম। সারাদিনে আর ট্রেনও নেই। এই সব ভাবছি, এমন সময় হঠাৎ হুড়মুড় ক’রে গেল কিউ ভেঙে। দেখি, জনতা উদ্ধশ্বাসে পাশের জানালার দিকে ছুটছে। কি ব্যাপার, কেউ বলে না। চেয়ে দেখি, এ জানালী বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছুটলাম পাশের জানালার দিকে । সেখানে তখন ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাৰি