পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী আরও ফাকি দিবে। অতএব সারকুলার বাহির করিয়া থার্ড পণ্ডিতকে মাপ করা হোক। কী জন্য সাসপেও করা হইয়াছিল, তাহার কারণ এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করিবার উপদেশ লিপিবদ্ধ করা থাকৃ সারকুলার-বহিতে। ইহাতে পণ্ডিত জন্ম হইয়া যাইবে। হেডমাস্টারের কর্ণদ্বয় মি: আলমের জিন্মায় থাকিত, স্বতরাং সেই মৰ্ম্মেই সারকুলার বাহির হইয় গেল। অন্যান্য শিক্ষকেরা জ্যোতিবিনোদকে ভয় দেখাইল, চাকুরি এবার থাকিল বটে, তবে বেশী দিনের জন্য নয়, এই সারকুলার স্কুলের সেক্রেটারি বা কমিটীর কোন মেম্বারের চোখে পড়িলেই চাকুরি যাইবে । ক্ষেত্রবাবু পড়াইতেছেন, হেডমাস্টার সেখানে গিয়| পিছনের বেঞ্চির একটা ছেলেকে হঠাৎ ডাক দিয়া ধলিলেন, তুমি কী বুঝেছ বল ? সে কিছু শোনে নাই, পাশের ছেলের সঙ্গে গল্পে মত্ত ছিল, তীক্ষদৃষ্টি ক্লার্কওয়েলের নজর এড়ানো সহজ কথা নয় । - হেডমাস্টার ক্ষেত্রবাবুর দিকে চাহিয়া বলিলেন, ডোণ্ট সিটু অন ইওর চেয়ার লাইক এ বাহাদুর—ছেলেরা কিছু শুনছে না। উঠে উঠে দেখুন, কে কী করচে না-করচে ! ক্ষেত্রবাবু ছেলেদের সামনে তিরস্কৃত হওয়ায় নিজেকে অপমানিত বিবেচনা করিলেন বটে ; কিন্তু সাহেবের কাছে বিনীতকণ্ঠে অঙ্গীকার করিতে হইল যে, তিনি ভবিষ্যতে দাড়াইয়া ও ক্লাসে পায়চারি করিতে করিতে পড়াইবেন। সাহেবের জের এখানেই মিটিবার কথা নয়। সে দিন স্কুল ছুটির পর টীচারদের মীটিং আহূত হইল। সাহেবের উপদেশবাণী বৰ্ষিত হইল। ছেলেদের স্বাৰ্থ বজায় রাখিয়া যিনি টিকিতে পারিবেন, এ স্কুলে তাহারই শিক্ষকতা করা চলিবে ; যাহার না পোষাইবে, তিনি চলিয়া যাইতে পারেন—স্কুলের গেট খোলা আছে। বেলা সাড়ে পাঁচটায় হেডমাস্টারের সভা ভাঙিল। মাস্টারের বাহিরে আসিয়া নানাপ্রকার মন্তব্য প্রকাশ করুিলন। যন্ধুবাবু লম্ফঝম্প শুরু করিলেন। —রোজ রোজ এই বাজেহাঙ্গামা আর সহ হয় না—সাড়ে পাচটা বেজে গেল—টিউশানিতে যাবার আগে আর বাসায় যাওয়া হবে না দেখছি, কবে যে আপদ কাটবে, নারায়ণের কাছে তুলসী দিই। আপনারা সব চুপ করে থাকেন, বলেনও না তো কোন কথা! সবাই মিলে বললে কি সাহেবের বাবার সাধ্যি হয় এমন করবার } অন্য দুই-একজন বলিলেন, তা আপনিও তো কিছু বলুলেন না যছুদা ! —আমি বলব কি এমনি বলব ? আমি যে দিন বলব, সে দিন সাহেবকে ঠ্যাল বুঝিয়ে দেব, আর ঠ্যালা বুঝিয়ে দেব ওই অস্ত্যজটাকে—ও-ই কুপরামর্শ দেয়। আর সাহেবের মতে আমন আইডিয়াল টীচার আর হবে না ! মারো খ্যাংরা। ক্ষেত্রবাবু বলিলেন, সে তো বোঝাই যাচ্ছে, কিন্তু ওকে নড়ানো সোজা কথা নয়। সাহেব ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, আর সবাই খারাপ, কেবল আলুম ভাল—