পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসাধারণ ૨૬-૧ তে কাও। ওষুধের দাম দিতে পারে না–ক-শিশি ওষুধের দাম এখনো বাকি । অনেকদিন উহাদের দেখি নাই। প্রায় ভুলিয়াই গিয়াছি । ভাদ্রমাসের দিকে আমাদের মহকুমার রিলিফ কমিটির যত্নে লঙ্গরখান। খুলা হইল । সেখানে প্রত্যহ বহু দুঃস্থ নরনারী লঙ্গরখানায় খিচুড়ি খাইতে আসিত। উহাদের মধ্যে একদিন আবার মেয়েটিকে দেখিলাম। একটা মালসায় করিয়া লঙ্গরখানার খিচুড়ি লইয়। কোথায় যাইতেছে । আমি ডাকিয়া বলিলাম –তুমি কোথায় এসেছিলে ? আমায় দেখিয়া সে লজ্জিত হইল । বলিল—এই— —তোমার স্বামী কোথায় ? —ওই পুরনো ডাকঘরের পেছনে বটতলায় । আজকাল হাটতি পারে না মেটে । —চলে দেখে আসি । g কৌতুহল হইল দেখিবর জন্ত, তাই গিয়াছিলাম। গিয়া মনে হইল ন-আসিলে আমাকে বড় ঠাকতে হইত—কারণ যে দৃশ্য দেখিলাম, তাহ সচরাচর চোখে পড়ে না। পুরানো পোস্টাফিসের পিছনে যেখানে গবর্ণমেণ্টের কলেরা ওয়ার্ডের ঘর, তার সামনে বটতলায় এক ছেড়া চাটাই পাতিয়া বৌটির খোড়া স্বামী শুইয়া আছে। মনে হইল লোকট। চাটাইয়ের সঙ্গে মিশিয়া আছে, এত রুগণ । মেয়েটি তার পাশে বসিয়া লঙ্গরখানার খিচুড়ি তাহাকে খাওয়াইতেছে । দুপুর বেলা । রাস্ত দিয়া অনেক লোক যাতায়াত করিতেছে, কেহ চাহিয়া দেখিতেছে, কেহ দেখিতেছে না । খাওয়ানে| শেষ হইলে সে কলের ওয়ার্ডের কম্পাউণ্ডের টিউবওয়েল হইতে শতাচ্ছন্ন শাড়ীর আঁচল ভিজাইয়া জল আনিয়া স্বামীর মুখে নিংড়াইয়া দিল । লোকটা ই করিয়া দু টোক জল গিলিয়া বলিল—আর একটু খাবো— মেয়েটি আবার গেল টিউবওয়েলের কাছে, আবার শাড়ীর আঁচল ভিজাইয়। জল আনিয়| ওর মুখে দিল। আমি কখনো এমন দৃপ্ত দেখি নাই । বলিলাম—আমন করে জল আনচো কেন ? মেয়েটি বঁ-হাত দিয়া কপালের ঘাম মুছিয়া বলিল—ঘটি-বাটি কিছু নেই। কিসে জল আনি ? —কেন মালসাটা ? সে মালসাটা তুলিয়া আমার কাছে আনিয়া দেখাইল। বলিল—সবটা খেতে পারে নি। আধ মালস রয়েচে । রাত্তিরে দেবো। খাওয়া কমে গিয়েচে একেবারে । ভারপর মালসাটা যথাস্থানে রাখিয়া আসিয়া বলিল—বড় কষ্ট হয়েচে বাবু-দিন না একটা কাজটাজ জুটিয়ে ? এক কাঠা চল শুধু—খুব কমের মধ্যে করে দেবে এই তাহার সহিত আমার শেষ সাক্ষাৎ ।