পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নদীর ধারের বাড়ী খামলীদের বাস ছিল পীতাম্বর লেনে। ছ নম্বর পীতাম্বর চৌধুরীর লেন । সেকেলে পুরনো বাড়ী, দোতলার ছটি ঘরে ছটি পরিবারের বাস । কলতলায় দুটি বেলা সমানে ঝগড়া চলে জল তোলা নিয়ে । শু্যামলী ওদের মধ্যে একটু দেখতে ভাল, বয়েস তিরিশের সীমান্ত ওপরে, দু-এক বছর ওপর । চার সন্তানের মা, দুটি মেয়ে, দুটি ছেলে । বেলা দশটা বাজে । স্যামলীর স্বামী খেতে বসেচে। শুমলী ডালের বাটিতে হাত ডুবিয়ে সামনে বসে আছে । শু্যামলী বললে—ফিরবে কথন ? গু্যামলীর স্বামীর নাম যদুনাথ ভট্টাচায্য । যদুনাথ একটা সওদাগরি আপিলে সত্তর টাকা মাইনের চাকুরী করে । যুদ্ধের বাজারে তাতে চলে না। খাওয়া-দাওয়ার অসীম কষ্ট । ছেলেমেয়েগুলো দুধ খেতে পায় না ; দুটাে শুকনো মুড়ি চিবোয় স্কুল থেকে এসে । যদুনাথ বললে—ফিরতে সাতটার পরে । —আর একটা বাড়ী ছাখো, বুঝলে । —লে তো বুঝলাম, বাড়ী মিলচে কই ? খুজতে কি কম করচি ? —এ বাড়ীতে আর টেকা যায় না । —কালও ঝগড়া হয়েছিল ? —কবে না হয় ? বিশ্বেস-গিল্পীর সঙ্গে মতির মা-র ঝগড়া কালও খুব । অভয়ার সঙ্গে রামবাবুর বৌয়ের ঝগড়া । —জল তোলা নিয়ে ? —তা আবার কি নিয়ে ? ও তো রোজকার ঘটনা লেগেই আছে। রোজ রোজ এ ইতরুমি আর ভাল লাগে না । অসহ্য হয়ে উঠেচে । যদুনাথ চলে গেল । শু্যামলীর ছেলেমেয়ের খেয়ে দেয়ে স্কুলে চলে গিয়েছিল ; ছেলে দুটি বড়, তারা হাই-স্কুলে পড়ে । মেয়ে দুটি পড়ে মোড়ের কর্পোরেশন স্কুলে । ছোট রান্নাঘর, একটি লোক কায়ক্লেশে বসে দুটি আহার করতে পারে। আজ ন’টি বছর এ বাসায়, বড় মেয়ে লীলার বয়েস। এই বাসাতেই লীলার আতুড় হয়েছিল। রান্নাঘরের সামনে খোলা ড়েনে তরকারির খোসা, ফেন, শাকের ডাটা, চিংড়ি মাছের খোসা জমে দুৰ্গন্ধ বার হচ্চে । এই দুৰ্গন্ধ আর এই কুত্র দৃগু আজ ন’ বছর ধরে সহ করতে করতে নাক অসাড় হয়ে গিয়েচে, এখন আর দুর্গন্ধকে দুৰ্গন্ধ বলে মনে হয় না। বীণা ওপরের তলার মনোরঞ্জনবাবুর মেয়ে। সে স্যামলীকে ভালবাসে । কাছ ঘেষে দাড়িয়ে বললে—কাকীমা কি রাধলে ? —মুরির ডাল আর চচ্চড়ি। —মাছ আনেন নি কাকাবাবু ?