পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৬ বিভূতি-রচনাবলী আইটাই করে গরমে। আজ ন বছর কষ্টভোগ চলচে । এই ঝগড়ার আবহাওয়া আর এই দারুণ স্থানাভাব। সকলের ওপরে এই অপরিষ্কার, নোংরা পরিবেশ। সবাই সমান অশিক্ষিতা, ভাল বললেও এ বাড়ীতে মন্দ হয়। সেদিন অপরাধের মধ্যে ও শশীবাবুর স্ত্রীকে বলেছিল— দিদি, চিংড়ি মাছের খোসাগুলো একেবারে সামনেই ফেললেন, কলতলায় সকলেরই যেতে আসতে হয়—সকলেরই তো অস্থবিধে । আর যাবি কোথায় ! শশীবাবুর বে চীৎকার জুড়ে দিলে—আমি কি একলা ফেলি নাকি, সবাই তো ফেলে, কেনই বা না ফেলবে ; ভাড়া দিয়ে সবাই বাস করে, কারো একার সম্পত্তি তো নয় ; সবারই সুবিধে এখানে দেখতে হবে—যদি তাতে অসুবিধে হয় তবে গরীব ভাড়াটেদের সঙ্গে বাস করা কেন, তাহলে দোতলা বাড়ী আলাদা ভাড়া নিয়ে বালিগঞ্জে গিয়ে বাস করলেই তে হয়-ইত্যাদি । খামলীও চুপ করে থাকবার মেয়ে নয়, সে বললে—দিদি, কি পাগলের মত বকচেন ? আপনি চিংড়ি মাছের খোসা ফেলবেন তাতে কেউ বারণ করচে না,তবে আমারই রান্নাঘরের সামনে কেন ফেলবেন ? কেন আমি তা ফেলতে দেবো ? —ফেলতে দেবে না তোমার কথায় ? কি তুমি এমন লাট সায়েব এয়েচ রে বাপু তুমি পাগল না আমি পাগল ? রান্নাঘরের বাইরের জায়গা তোমারও যা, আমারও তা–তুমি বলতে আসবার কে ? —তা বলে পরের স্ববিধে অসুবিধে যারা না দেখে তারা আবার মানুষ ? তাদের আমি ঘোয় অমানুষ বলি । এই পৰ্য্যন্ত গেল সাধারণ ভাবের কথা, একে ঝগড়া বলে অভিহিত করা যায় না । এর পর বাধলে আসল ঝগড়া যার নাম— শুমলীও ছাড়লে না, শশীবাবুর বোঁও না—উভয়পক্ষে বাধলে কুরুক্ষেত্র । তারপরে কথা একদম বন্ধ হয়ে গেল দুপক্ষেই। নানারকম শক্রতা আরম্ভ করলেন শশীবাবুর প্রৌঢ় স্ত্রী। ছেলেমেয়ের হাত ধরে খোলা ড্রেনে বসিয়ে দিতে লাগলেন সকালবেলা, পায়খানা থাকা সত্ত্বেও । প্রায় শু্যামলীর রান্নাঘরের সামনেই । কিছু বলবার জে নেই। ওই আর এক গোলমাল। একটি মাত্র পায়খানা নিচে । মেয়ে পুরুষ তাতে যাবে। কি নোংরা করেই রাখে মাঝে মাঝে। ভোরে অন্ধকার থাকতে যদি ঘুম ভাঙে, তবে কল পায়খানা ব্যবহার করা যাবে সেদিন, নয়তো বেলা এগারোট, পুরুষরা সবাই অাপিসে বেরিয়ে গেলে । চৌবাচ্চায় তখন দু ইঞ্চি মাত্র জল থাকে কোনোদিন, কোনোদিন তারও কম । শু্যামলীর দম বন্ধ হয়ে আসে ।••• এমন কি কোনো বাসা পাওয়া যায় না যাতে অন্ততঃ মেয়েদের একটা আলাদা নাইবার জায়গা আছে ?••• আষাঢ় মাসের প্রখম ।