পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মদিন আজ সকালের দিনটাই যেন কি রকম । যা-কিছু করবার ছিল, শেষ হয়ে গিয়েচে রায় বাহাদুরের, প্রথম যৌবনে যখন রাতুলপুর লালমোহন একাডেমির তিনি হেডমাস্টার—মাসিক বেতন ত্রিশ টাকা মাত্র, তখন সেই রাতুলপুরের স্কুলে পায়া-ভাঙা চেয়ারে বসে সম্মুখস্থ নিবিড় বাশবনের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে কত কি দেখতে পেতেন সিনেমার ছবির মত। দেখতেন, এ দুঃখ থাকবে না, জীবন আসচে সামনে । সে জীবনে কলকাতায় তার ভিলা হবে বালিগঞ্জে, মোটর থাকবে, কলিং-বেল টিপলে উর্দিপরা খানসামা ঘরে ঢুকবে। তখন ছিল স্বপ্ন, স্বপ্ন ছিল অপূৰ্ব্ব রঙে রঙিন । আজ র্তার বয়েস একষটি। আজ একষটিতে পা দিলেন । লেক প্লেসের বাড়ীর, নতুন বাড়ীর তেতলায় যে ছোট ঘরটি তার শোবার ঘর, সে ঘরে আজ ভোরে জেগে উঠে দেওয়ালের ক্যালেণ্ডারের দিকে চোখ পড়তেই রায় বাহাদুর দেখলেন আজ সীতাশে আষাঢ়, তেরশে বাহান্ন সাল। একষটি বছরে পড়লেন তিনি আজ । সকালটা কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন নয়। দিব্যি রোদ উঠেচে বাড়ীর ছাদের মাথায়, সোদালি গাছগুলোর মগ-ডালে। মন কেমন চঞ্চল হয়ে উঠলো, চা-পানের পর বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়লেন। ছোট মেয়ে স্থমিতা বলেছিল—বাবা, টেস্ট ভাজা হচ্চে, দুখান খেয়ে যাও চায়ের সঙ্গে— —না: ও কি মাখন ? আজকাল মাখন বলে যা বিক্রি হয় ও-দিয়ে টেস্ট আমাদের ধাতে সয় না । তোরা খা— বলে রায় বাহাদুর বেরিয়ে পড়েচেন । খানিকটা এ-দিক ও-দিক ঘুরে রায় বাহাদুর লেকের ধারের বেঞ্চিতে এসে বসলেন। একখানা মিলিটারী বোট কিছু দূরে ভাসাতে চেষ্টা করচে। একখানা লরি নিকটের রাস্তায় স্টার্ট দেওয়ার প্রচেষ্টায় প্রচুর গ্যাগ ও শব্দ ছাড়ছে। না, কোথাও যদি একটু শাস্তি আছে । একষটি হোল তা হোলে । যখন তিনি বোল সতের বছরের ছেলে, তখন মনে আছে কারো বয়েস বত্রিশ কি চৌত্রিশ বছর শুনলে তাকে প্রৌঢ় বলে মনে হোত । চল্লিশ বছরের লোক তো ছিল বৃদ্ধের মধ্যে গণ্য । আর এরই মধ্যে র্তার একষটি বছর বয়েস হয়ে গেল ? নিজেকে খুব বেশী বুড়ে বলে মনে করতে পারছেন না রায় বাহাদুর। সেদিনও তো ধৰ্ম্মতলার চুলকাটার সেলুনে বসে চুল ছাটিয়েছেন—কত দিন আর হবে? রায় বাহাদুর মনে মনে একটা মোটামুটি হিসেব করবার চেষ্টা করলেন । কাশী থেকে এসেচেন সেবার। বেশ মনে আছে । লেসলির বাড়ীতে র্তার শালাকে সে-বার চাকুরী জুটিয়ে দিলেন গণেশ সরকারের সাহায্যে। গণেশ সরকার তার সহপাঠী, দুজনে একসঙ্গে সে-কালের সিটি কলেজে পড়ে