পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসাধারণ 婚● বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী সেদিন তার মায়ের তিথি উপলক্ষে ব্রাহ্মণভোজনে গ্রাম্য মাস্টারটিকেও নিমন্ত্রণ করেচেন। খেতে বসেচেন ভাবী রায় বাহাদুর। পরিবেশন করচে নিরুপমা, আরও পাচছ জন ব্রাহ্মণ একত্র খেতে বসেচে। হঠাৎ খেতে খেতে মুখ তুলে দেখলেন নিরুপমা ঘরের মধ্যে জানলার কাছে দাড়িয়ে একদৃষ্টি তার দিকে চেয়ে আছে। উনি ঈষৎ হেসে ফেলতেই নিরুপমাও মৃদু হেসে জানলা থেকে সরে গেল । কালকের কথা বলেই মনে হচ্ছে । অথচ কত কাল হয়ে গেল—চল্লিশ বছর ! আজও চোখ বুজলে নিরুপমার সে সলজ্জ দুষ্টুমির হাসি তিনি দেখতে পান। এক-আধ দিন নয়, এ রকম কত ঘটনা ঘটেছিল এক বছর ধরে। নিরুপমার সঙ্গে তার বিবাহের প্রস্তাবও হয়েছিল। বিবাহ হয়েও যেতো কিন্তু গ্রামের বিধুভূষণ মজুমদার এক সামাজিক জোট পাকালেন। রায় বাহাদুর কিশোরকুণি থাকের ব্রাহ্মণ, অর্থাৎ কৃষ্ণনগরের রাজারা যে বংশের । তখনকার আমলে কিশোরকুণি থাকের পাত্রকে কুলীনের কন্যাদান করতেন না। সেকালে এমনিই ছিল । বিবাহ ভেঙে গেল। রায় বাহাদুর বিদেশী লোক, কেউ তাকে খবর দেওয়ার ছিল না । বিবাহের দিন নিরুপমা কেঁদেছিল, না, কাদে নি ? শুধু সংবাদটা পাবার জন্তে রায় বাহান্থর কত চেষ্টা করেচেন, কেউ এ সংবাদ তাকে দিতে পারে নি। আর কখনো নিরুপমার সঙ্গে তার দেখাও হয় নি। কেই বার্তাকে সংবাদ এনে দেবে ? এই ঘটনার কিছু দিন পরে রায় বাহাদুর সে গ্রাম ত্যাগ করে আসেন। আর যান নি কোনো দিন। জীবনের প্রথম প্রেম, সে সব দিনের কথা ভাবলেও হারানো যৌবন আবার ফিরে আসে যেন | ওখান থেকে চলে আসবার পর তিনি কত বার ভেবেছেন, নিরু আজ কোথায় আছে ? কেমন আছে ? তার জন্য নিরু কি ভেবেছিল ? এ সংবাদ তাকে আর কেউ দেয় নি। বিবাহ করেছিলেন বড়লোকের মুন্দরী মেয়েকে । কিন্তু নিরুকে ভোলেন নি কোনো দিন। প্রথম প্রথম খুবই ভাবতেন, মধ্যে দশ-বিশ বছর আর তেমন ভাবতেন না, অর্থ উপাজ্জনের নেশায় ভুলে ছিলেন। এখন আবার মাঝে মাঝে মনে হয় । একটি তরুণ যুবক এসে কিছু দূরে একটা নারকোল গাছের তলায় দাড়ালে। এ-দিকে ও-দিকে চেয়ে যেন সে কাউকে খুঁজচে । রায় বাহাদুর সচকিত হয়ে উঠলেন। ছোকরা নিশ্চয়ই ওর প্রেমিকার সন্ধানে এসেচে। তার ছোট ছেলে অমিয়জীবনের বয়সী। আজকাল অমনি হয়েছে যে। তাদের সময়ে কিছুই ছিল না। তরুণী অভিসারিকারের পক্ষে স্বর্ণযুগ চলেচে এটা। কই, ছোকরা একা বলে আছে উদভ্ৰাস্ত ভাবে, তিনি কই ? মানে, মা লক্ষ্মীটি ? এখনো আলেন না কেন ? আজ রায় বাহাদুরের ইচ্ছে হোল রাতুলপুরে যাবেন। একবার গিয়ে দেখে আসবেন।