পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসাধারণ 粤为创 দেখাশুনা করি, ছু-তিনটি ছোকরা আমাদের নির্দেশ অনুযায়ী দূরের থেকে কখনো ওষুধ, কখনো ডাক্তার, কখনো ফল, কখনো বরফ আনতে দিনে রাতে চার-পাচার ছুটোছুটি করে। তরণী স্ত্রী ও ছেলেমেয়েগুলির মুখের দিকে চেয়ে গ্রামের লোকের কোনো কষ্টকেই কষ্ট বলে গ্রহণ করে মা | কিন্তু কিছুতেই কিছু হোল না। চব্বিশ দিন জরভোগের পর রোগী মারা গেল। গ্রামের মেয়েরা চার-পাচদিন ধরে ব্যস্ত রইল সদ্যোবিধবা মেয়েটিকে সান্ধন দিতে। পুরুষেরা ব্যবস্থা করতে লাগলেন ওদের বিষয়-আশয় কি হবে, চাষবাসের কি বন্দোবস্ত করা যায় । কান্নাকাটির গোলমালে দিন দশ বারো কেটে গেলে একদিন সন্ধ্যাবেলায় একটা দৃশ্য দেখলুম, যা আমার আছে এত ভাল লাগলো যে শুধু যেন সেই ঘটনার কথা বলতেই এ গল্পের অবতারণা । বেলা আর নেই, ছিপগুলি নিয়ে, পুকুর থেকে ফিরচি মাছ ধরে, ওদেরই বাড়ীর পাশ দিয়ে । দেখি যে সেই কাঠ-বিক্রি বুড়ো মুসলমান ওদের উঠোনে বসে তরুণী বিধবাকে সাত্বনা দিচ্ছে। রাস্তার ধারেই ওদের রান্নাঘরের ছেচতলা, প্রতিবেশীর স্ত্রীটি বসে কি কাজ করচে রান্নাঘরের দাওয়ায় আর বুড়ে বসে আছে ছেচতলায়। শুনলাম ও বলচে—সব দিকই দেখুন মা ঠাকরেনি, বেঁচে চেরকাল কেউ থাকে না। তিনি অল্প বয়সে গিয়েচেন এই হোল আসল কষ্ট । তা আপনার কাচ্চাবাচ্চাদের মুখির দিকে চেয়ে আপনি কোমর বাখুন। নইলে আজ আপনি অস্থির হলি, ওরা কোথায় দাড়াবে মা ঠাকরোন ? চোকির জল আর ফ্যালবেন না—আপনার চোকি জল দেখলি বুক ফেটে যায়— আমি ততক্ষণ দাড়িয়ে গিয়েচি। দেখি যে বুড়ে মুসলমান ময়লা গামছার খুটে নিজের চোখের জল মুছে ফেলচে । এর চেয়ে কোনো অপূৰ্ব্বতর দৃপ্তের কল্পনা আমি করতে পারি নে। সেই সন্ধ্যায় একটি অতি মধুর গীতি-কাব্যের মত মনে হোল এর উদার আবেদন । হারুণ অল রসিদের বিপদ জানিপুর থেকে ছুটি ছেলে পড়তে আঁসে ইস্কুলে। এ অঞ্চলে আর ইস্কুল নেই, ওদের বাড়ীর অবস্থা ভালো, যদিও সাতপুরুষের মধ্যে অক্ষর পরিচয় নেই, তবুও বাপমায়ের ইচ্ছে, যখন ধান বেচে কিছু টাকা পাওয়া গেল, তখন ছেলেরা লেখাপড়া শিখুক। চাষ লোকেদের জন্তে লেখাপড়ার দরকার আছে বই কি। ধানের হিসেব, জন মজুরের হিসেব রাখাও তো চলবে ।