পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তেঁতুলতলার ঘাট হারুর আজ আর জর আসে নি। এখন তার মনটাতে বেশ ফুৰ্ত্তি আছে । জর এলে আর ফুৰ্ত্তি থাকে না। কিছু না কিছু নিরানন্দ আসেই । আজ চার মাস ধরে সমান ভাবে ম্যালেরিয়া জর, পেট-জোড়া পিলে, আর সর্বদাই ভয় ওই বুঝি জর এলো। অনেকেই ওকে দেখে বলে—ইস্ । ছেলেটার মৃত্যু দশা হয়েছে একেবারে । এবার বুঝি বা সরে । এ সব বলতে এমন সব লোকে, যার ওকে ভালবাসার চোখে দেখে না । যে ভালোবাসার চোখে দেখে সে কি এমন কথা বলতে পারে হারুও তা বুঝতে, বুঝে চুপ করে থাকতো । জর আসাটা যেন ওর মস্ত অপরাধ, এজন্যে সে একদিকে যেমন বাড়ীতে বাবা ও পিসিমার, অন্য দিকে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছেও অপরাধী । ওর মা বলে—সকলের হাড জালালি তুই বাপু, কাকু সোয়াস্তি নেই তোর জন্যে । অথচ কেমন মুন্দর দিনগুলি । সুনীল আকাশ, অস্তুত ধরনের স্বনীল আকাশ। ঝলমলে রোদ পড়েচে পথঘাটের দুধারে বনে ঝোপে। রাস্তাঘাট এখনো খটখট করচে । আজ দিন কুড়ি একদম বৃষ্টি বন্ধ। চাষার রোজ গাজিতলায় রোজ-পালুনি করচে। আল্লা আল্লা বলে মাঠে বুক চাপড়ে চীৎকার করচে, বৃষ্টির চিহ্নও নেই। মেঘই নেই আকাশে তার বৃষ্টি। ধান এবার হবে না সবাই বলচে। এই সব দিনে প্রত্যেক ঝোপে, প্রত্যেক লতার তলায় যখন রোদ পড়ে, যখন মউটুকি পাখী বন-চন্দনা লতার আগায় মুখ উচু করে দোল খায়, কটুগন্ধ ঘেটকোল ফুলের দল ঝোপে ঝাড়ে ফোটে, তখন ঘর আর বার একাকার হয়ে যায়, ঘরে মন বসে না। হারু তখন পাশের বাড়ীর চুমুর আর মণ্ট বাডী যায়। মন্ট মায়ের জন্যে ডাটা শাক তুলচে ওদের বাড়ীর সামনের ক্ষেতে। ওকে দেখে বললে –কিরে, আজ জর আসে নি তোর ? যেন তার জর আসাটা প্রভাতকালে স্বৰ্য্যোদয়ের মত একটা প্রাকৃতিক ঘটনা। কেন যে ওরা জরের কথাটা মনে করিয়ে দেয় ! হার বললে—ন, জর কিসের ? চল বেড়িয়ে আসি । —মাকে ডাটাগুলো দিয়ে আসবো । তুই একটু দাড়া । —এ ক্ষেত করেচে কে ? —তুই জরে পড়ে ভুগবি, দেখতে তো আসবি নে ? এবার এ ক্ষেত আমি করেচি। মা বললে, তাটা করে রাখ জমিটাতে, তাই জমিট করলাম। হারুর মনে দুঃখ হলো বার বার তার জর আসার উল্লেখ করাতে। একবার এত রাগ হলে, লে বেড়াতে যাবে না কাক্ষর সঙ্গে। একাই লে পথে পথে আগেও খেলা করতে এখন জর হওয়ার পর থেকে মনটা কেমন হয়ে পড়েচে, একা বেড়াতে ভয় ভয় করে,