পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Փզֆ विङ्कडि-ब्रध्नांवनौ মুগের ডাল, উচ্ছে ভাজ, আলুভাতে, ঘন আওটানো সরপড়া দুধ, ছুটি পাকা কল, একদলা আখের গুড়ের পাটালি। অদ্ভুত রান্না বুড়ীর হাতের। আলিগড়ের পশ্চিম পাচকের হাতের রান্না খাইয়া সে আজীবন অভ্যস্ত—এমন চমৎকার রান্নার সঙ্গে পরিচয় ছিল না ! উচ্ছ্বসিত প্রশংসার স্বরে বলিল—এমন রান্না কখনো খাই নি দিদিমা ! শুনতাম বটে বাংলা দেশের পাড়াগায়ের রান্নার কথা—কিন্তু এ যে এমন চমৎকার তা ভাবি নি— বুড়ী হাসিয়া বলিল—রান্না করতে পারতেন আমার শাশুড়ী। তার কাছেই সব শেখা ৷ ডাকসাইটে রাধুনি ছিলেন আটখানা গায়ের মধ্যি— বুড়ীর কথার মধ্যে যশোর জেলার টান নীরেনের বড় ভাল লাগিল । শুইয়া শুইয়া উঠানের নারিকেল বৃক্ষশ্রেণীর পাতার কম্পন দেখিতে দেখিতে নীরেন ভাবিতেছিল, এই তাহার স্বদেশ, তাহার অতি প্রিয় স্বদেশ। এই তাহার মায়ের জন্মভূমি, পিতার জন্মভূমি, পূর্বপুরুষদের জন্মভূমি—বাংলা দেশ। কেন এতকাল সে মাতৃভূমিকে ভুলিয়া ছিল ? ভাগ্যের দোষ । সে কি জানিত এত সৌন্দৰ্য্য বাংলাদেশের রাত্রির অন্ধকারে ? গন্ধতর অন্ধকারে ? পাখীর ডাকের মধুর তান সে হিমালয়ে শুনিয়াছে। আলমোড়ায় ল্যান্সডাউনে শুনিয়াছে । তাহার ধনী মাতামহের সঙ্গে কয়েকবার সে সব স্থানে সে গিয়াছিল। দেবতাত্মা নগাধিরাজ মাথায় থাকুন—মাথায় থাকুক ক্যামেলস-ব্যাক-এর অপূর্ব দৃপ্ত, মুসোঁরীর অতুলনীয় গিরিশোভা—এখানকার পক্ষীকুলের স্বমিষ্টকাকলী যেন বহুপরিচিত বিগত দিনের প্রিয়জনের বাৰ্ত্ত বহন করিয়া আনে, কত দিনের ঘরোয় কাহিনী এদের সঙ্গে জড়ানো । বুড়ী বলিল—ঘুম হচ্চে না ভালো গরমে বুঝি ? পাখা নেবা একখানা ? —লা দিদিম । নতুন জায়গা বলে ঘুম আসচে না, গরমে নয়। —এবার ঘুমিয়ে পড়ো ভাই— —হঁ্যা দিদিমা—? —কি ভাই ? —আমার বাবাকে আপনি দেখেছিলেন ? —না ভাই, আমার কোথাও যাতায়াত ছিল না । শুনিচি তার কথা, দেখি নি কখনো— তোমাদের গা ছিল তো— —গড় মুকুন্দপুর। নাম শুনিচি, তবে যাই নি সেখানে । সকালে উঠিয়া বুড়ি বলিল-ই ভাই, তোমরা শহরের লোক, সকালে কি থাও? নীরেন হাসিয়া বলিল—যা খাই, তা কি দিতে পারবেন দিদিম ? চা ? বুড়ি বলিল—ও আমার পোড়া কপাল । ও-সব যে কখনো খাই নি, ভাই, ওসবের পাটও নেই। একটু বেলের শরবত করে দি । ডোবার ধারের বেলগাছটায় কাল ছুটাে পাকা বেল পেইছিলাম ভাই ।