পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Oéo" বিভূতি-রচনাবলী থাকে না । দুটি দেওর বাহিরে চাকুরি করে, সেখানেই পরিবার লইয়া থাকে ; যে দেওরপে এখানে আছে ওটি পিতৃমাতৃহীন অনাথ ! জ্যাঠাইমার কাছে মানুষ হইতেছে- জ্যাঠাইবা ভালও বাসেন । দেওরপোর নাম কাল্প। কাকু নীরেনকে খুব ভালো চোখে দেখে নাই । এই মূল্যের বাজারে ইনি আবার কোথা হইতে উড়িয়া আসিয়া জুড়িয়া বসিলেন ! কেন রে বাবা। যে তিন বিশ ধান হুইয়াছিল, ইনি এখানে আসিলেন,—তাহাতে ক'দিন যায় ? জ্যাঠাইমাও দেখিতেছি নীরু বলিতে অজ্ঞান ! কান্থ আসিয়া বলিল—যাত্রা দেখতে যাবেন ? —কি যাত্রা ? 番 –এই দিগি—গোনাই যাত্র । —সে আবার কি ? —দেখবেন এখন । দিন দিকি একটা টাকা চাদ । , নীরু একটা টাকা বাহির করিয়া কাল্পর হাতে দিল । গোনাই যাত্রার আসরে বসিয়া নীরেন যাত্রা তত দেখে নাই, যত সে এই স্বন্দর রাত্রিটি ও যাত্রার আসরের পরিবেশের কথা চিন্তা করিয়াছে। যেখানে যাত্রার আসর, সেটা ছোট একটা মাঠ, তার চারিপাশে বনজঙ্গল, একদিকে বনের প্রাস্তে একটা কামারের দোকান, সেখানে এখনও হাপরে আগুন জলিতেছে। বঁাশের খুটিতে পাল টাঙানো হইয়াছে। পান বিড়ির দোকান বসিয়াছে, চাষা লোকে যাত্রা দেখিতে আসিয়া পানের দোকানের সামনে ভিড় করিতেছে। একটা মুচুকুন্দ চাপার গাছতলায় ফুল পডিয়া বিছাইয়া আছে। বাতাসে মুচুকুন্দ চাপার স্ববাস । একটি গ্রাম্য মেয়ে ছিল গোনাই বিবি। তারই মুখ দুঃখের কাহিনী । নরেনের পক্ষে এমন বিশেষ কিছু নয়, কিন্তু যারা শ্রোতার দল, তাদের সারারাত্রি জাগিয়া দেখিবার বস্তু । ভ্রাতার বিরহে কাতরা তরুণী গোনাই বিবির সে করুণ গান, ও বছির, বছির রে, বৈঠা হাতে নিলি রে’ অনেকের চোখে জল আনিয়া দিল । নীরেন ভাবিতেছিল বহুদূরের লিপুলেক গিরিবক্সে বরফ গলিয়াছে। দলে দলে বাবা-র পিঠে বোঝাই দিয়া যাত্রীরা চলিয়াছে মানস সরোবর ও কৈলাসের পথে । গুরলা মান্ধাতার তুষারাবৃত শৃঙ্গ সায়ােহদিনের স্বৰ্যকিরণে সোনার রং ধরিয়াছে। তাহার দাদামহাশয়ের বন্ধু করালীচরণ মজুমদার সন্ত্ৰীক এই মাসের শেষে মানস সরোবরে রওনা হইবেন, সঙ্গে যাইবেন নীয়েনের দিদিমা ও বড় মামীম, বাড়ীর গোমস্ত নান্থ চকত্তি। আলিগড় হইতে আলমোড়া। আলমোড়া হইতে ধারচুলা । ধারচুলা হইতে লিপূলেক পাস। লিগুলেক হইতে মানস সরোবর। সে নিশ্চয় ঘাইত ওখানে থাকিলে । কিন্তু সেজন্য তার দুঃখ নাই। বাংলাদেশে সে জালিয়াছে মাতৃভূমির সঙ্গে নিবিড় পরিচয়ের সন্ধানে। গাছপালায়