পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●ፃፀ বিভূতি-রচনাবলী সেই বৃদ্ধ বললে—বাওনদের ছেলে। বোধ হয় বাবুদের বাড়ীর। ভূপেনবাবুর নাতি নন্দ বসিয়ে রেখে গেল। ভয় কি খোকা ? তয় কি ? শসা খাবা ? শসা থাবে কি, লোকটার হাবভাব ও রক্তবর্ণ বড় বড় চোখ দেখে আমার প্রাণ তখন উড়ে গিয়েচে । আমি কাঠের পুতুলের মতো আড়ষ্ট হয়ে বসে আছি। দস্থ্য ডাকাতের গল্প শুনেচি, সেই দস্থ্য-ডাকাতদের একজন নয় তো ? হঠাৎ লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললে—তয় কি, বাবাঠাকুর ? ভয় কি ? কিছু ভয় নেই। বোসে । তারপর একেবারে কাছে এসে অত্যন্ত মোলায়েম স্নেহের হাসি হেসে বললে—আহাঁ বালক ! আমি চুপ করে বসে আছি। বোবার শত্রু নেই। লোকটা বললে—নাম কি বাবাঠাকুর ? ভয়ে ভয়ে বললাম—পতিতপাবন মুখোপাধ্যায়— —পতিতপাবন ? বাঃ, বেশ, বেশ । পতিতপাবন যিনি, তিনিও তোমার মতো । আহা হা ! আহা ! লোকটা শেষের কথাগুলো কাদো কাদো স্বরে জোরে জোরে উচ্চারণ করলে। তারপর বললে —ওগো, পতিতপাবনের ভোগ দেবে কি দিয়ে ? আমার বাড়ী এলেচেন দয়া করে, সে অদৃষ্ট করি নি যে বাবাঠাকুর । তোমার ও মুখে কি তুলে দেবো ? পাকা তাল একটা নিয়ে যাও— তালের বড়া ভেজে দিতে বোলে তোমার মাসিমাকে— আমার কথাগুলো ভালো লাগলো এবং ভয়ও অনেক চলে গেল। কিন্তু ওর রকম-সকম দেখে মনে হোলো লোকটা পাগল ঠিকই । তাই ওকে পাগল ঠাকুর বলে । পাগল ঠাকুর ছোট ঘরটার দাওয়ায় গিয়ে বসে আমায় কাছে ডাকলে । হাতছানি দিয়ে বললে —এসে পতিতপাবন, এসে এসো— বৃদ্ধ বললে—ওকে ডেকো না, ভয় পেয়েচে । কিন্তু আমি সম্প্রতি নির্ভয় হয়েচি দেখাবার জন্যে পাগল ঠাকুরের পাশে গিয়ে বসলাম । পাগল ঠাকুর একখান খেজুরের চেটাইয়ের উপর বসে এক কন্ধে তামাক না গাজা কি সাজলে । জামায় বললে—তুমি বাওন ? 一楼川1” —পায়ের খুলে দেবে একটু ? —জামায় ছুয়ো না । মাসিম বারণ করেচে। পাগল ঠাকুর ছেলে উঠে বললে—কেন, নাইতে হবে বুঝি ? তা আমায় ছুলে তোমায় নাইতে হবে না। আমি বঁাওন নষ্ট, কিন্তু দয়াল গুরুর নামে থাকি । তিনি আমাদের সকলের চেরে বড়। দাও, পায়ের খুলো— পাগল আমার পায়ের ধুলো নিয়ে মাথায় দিলে।