পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসাধারণ ՓՆ Ֆ আমি বললাম, জামায় এগিয়ে দিতে হবে না, একাই যেতে পারবো । কারণ মাসিম টের পেয়ে যাবেন যে আমি এতক্ষণ কোথায় ছিলাম । তিনি পছন্দ করবেন না আমার এখানে আসাযাওয়াট। মনে মনে তা আমি জানি। সুতরাং কড বেলতলা দিয়ে একাই বাড়ী চলে গেলুম । মালিমাকে পাগল ঠাকুরের কথা কিছু বলি নি। তিনি নিজেই জিজ্ঞেস করলেন—ওদিকে গিইছিলি নাকি ? —কোন দিকে ? —পাগল ঠাকুরের আখড়ায় ? —হঁ্যা। একটু বসে ছিলাম। বেশ ভালো লোক । কোথায় কলের হয়েচে, নিজে গিয়ে তাদের সেবা করচে রাত্তির বেলাতে । -ह । ঐ পৰ্য্যন্ত। উনি চুপ করে গেলেন, বুঝলুম না রাগ করলেন কিনা। তার পরদিন আবার বিকেলে পাগলের আখড়ায় গিয়ে হাজির হই । কিসের একটা টান অনুভব করলাম, না গিয়ে থাকা গেল না । পাগল ঠাকুর আপন মনে বসে গান করছিল একখানা তালপাতার চেটাই পেতে । ওর গানই ওর উপাসন, ওর মুখে গান শুনলেই আমার তা মনে হয়েচে । আমার বয়েস কম হোলেও আমি তখন অনেক বুঝি। ওর মত ভক্তি আমি কারো দেখি নি। মাসিমাকে বাড়ী ফিরে কথাটা আমি বলেছিলাম। মাসিম গীতা নিয়মিত পাঠ করতেন, রামায়ণ মহাভারত র্তার বড় প্রিয় ছিল, ব্রত উপবাস করতেন, রোজ ভোরে গঙ্গাস্নান করে পূজো-আচ্চা করতেন বেলা নট পৰ্য্যন্ত। কৃষ্ণ ঠাকুরের ছবিতে চন্দন মাখাতেন, ফুল দিতেন। পাগল ঠাকুর ওসব কিছু করে না অথচ সে ভক্ত লোক, এ কথা মালিমা বুঝবেন না । তবুও মাসিমা মন দিয়ে কথাটা শুনলেন, শুনে চুপ করে রইলেন। পাগল ঠাকুরকে বললাম—কখন এলে কাল রাত্তিরে ? —লারারাত ছিলাম বাবাঠাকুর । দুটোই মারা গেল, শ্মশানে গেলাম তাদের ভাসিয়ে দিতে । —পোড়ালে না ? — গরীব লোকদের পোড়াচ্চে কে বাবাঠাকুর । কাঠকুটো কোথায় ? গুরু-গোসাইয়ের নামে গঙ্গার বুকে ভাসিয়ে দিলাম—আর ভাবনা কিসের ? দেহটা হাঙ্গর কুমীরে খেলেও দেছ দিয়ে জীবের উপকার হোলো । পুড়িয়ে দিয়ে ফল কি, বলে ? ওদের একটা ছেলেকে নিয়ে এলাম আমার এখানে। ওই দ্যাথো, কাঠ কুড়িয়ে আনচে, ছোট ছেলে, কেউ নেই–গুরু-গোলাই ভাই আমার ঘাড়েই চাপালেন। তার হুকুম। ও এমনভাবে কথা বলচে যেন ভগবান ওর সঙ্গে পরামর্শ করেন সব কথায়, আমার হাসি পেল । ষা হোক, ওর মন ভারি সরল । জামাৰে ওই পাগল ঠাকুর ভয়ানক বেঁধেচে, ক্রমে বুঝচি ৷ বিকেল হোলে জাসতেই হবে