পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ई अद्भ१) रुर्थी कe ❖እግ কত রূপই প্রত্যক্ষ করেছি ইছামতীতে সঁতার দিতে দিতে এমনি কত নিদাঘ সন্ধ্যায়, বর্ষ। অপরাহের বৃষ্টিধারামুখর নির্জনতায় । আজ দেখলুম, কুঠার দিকে কি অদ্ভূত কালে মেঘসজ্জা—উড়ে আসচে ভাঙা নীল কুঠাঁটার জঙ্গলের দিক থেকে আমাদের ঘাটের দিকে । কি সে অদ্ভুত রূপ । বিশ্বরূপের এ সব রূপ—এ পটভূমিতে, এমন অবস্থায় দেখবার সৌভাগ্য আমায় দিয়েচেন বলে তাকে ধন্যবাদ দিলাম। তিনিই দয়া করে যাকে দেখতে দেন, সে-ই দেখে । সারাদিন কাটলো ট্রেনে । তিন বার অপূৰ্ব্ব দৃপ্ত দেখলাম—একবার ব্রাহ্মণী নদীর সেতুর কাছে বিস্তৃত কটা রংয়ের বালুরাশির ওপর দিয়ে শীর্ণকায় দ্বিধার ব্রাহ্মণী বয়ে চলেচে —দূরে নীল পৰ্ব্বতমালা, ঘন সবুজ বনানী। বাংলাদেশের বন অথচ তার পেছনে আকাশের গায়ে সিংডুমের চেয়ে খামলতর শৈলশ্রেণী। আর একবার এই রকম দৃপ্ত দেখলাম কটকের এপাশে মহানদীর সেতু থেকে এবং ওপাশে কাটজুড়ির সেতু থেকে । ট্রেন যত পুরীর কাছাকাছি আসতে লাগলো বনবনানী ততই শু্যামলতর, নারিকেল কুঞ্জ ততই ঘনতর, দোলায়মান বেণুবনশ্রেণী ততই নবতর রূপ পরিগ্রহ করতে লাগলো। ভুবনেশ্বর স্টেশনের কাছে অনেকদূর পর্য্যন্ত মাকড়া পাথরের মালভূমি বা টাড় এবং এক প্রকারের সাদা ফুল-ফোটা ঝুপি গাছের ঘন সবুজ বন । বাংলাদেশের চেয়েও শুামল এসব অঞ্চলের তৃণভূমি ও বনানী । বনপুষ্পের বৈচিত্র্য তেমন চোখে পড়লো না । বর্ষার দিন, ভুবনেশ্বরের এদিক থেকে বর্ষা শুরু হয়েচে, ক্রমেই বৃষ্টি বাড়চে বই কমচে না। পুরীর ঠিক আগের স্টেশন হোল মালতীপাতপুর। উড়িষ্যার এই ক্ষুদ্র পল্লা যে একটি শ্রেষ্ঠ সৌন্দৰ্য্যভূমি শুধু তার ঘন নারিকেলকুঞ্জ ও খাম বনশোভায়—এ আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি। পুরী স্টেশনে গজেনবাবু ও স্বমথ এসে আমাদের নামিয়ে নিয়ে যেতে যেতে গল্প করচে— হঠাৎ সামনে দেখি অকুল সমুদ্রের নীল জলরাশি ! সে কি পরম মুহূৰ্ত্ত জীবনের । সমস্ত দেহে যেন কিসের বিদ্যুৎ খেলে গেল। কল্যাণী দেখি হঠাৎ অবাক হয়ে ই করে চেয়ে আছে । সমুদ্র দেখেছিলুম বহুকাল আগে কক্সবাজারে—আর এই ২০২১ বছর পয়ে আজ পুরীর সমুদ্র দেখলুম। সন্ধ্যায় ৮জগন্নাথের মন্দির দেখে এলুম। শ্ৰীচৈতন্য যেখানে দাড়িয়ে থাকতেন, সে স্তম্ভের সামনে দাড়িয়ে সৰ্ব্বশরীর যেন অবশ হয়ে গেল। আধ অন্ধকার গর্ডদেউলে বহু নরনারী দাড়িয়ে জগন্নাথের বিগ্রহ দর্শন করচে–ভক্তবৃন্দের মুখে হরিধ্বনি, নানা মন্দিরের গর্ভগৃহ, সেখানে ধাধা প্রদীপের মিটমিটে আলোয় কত কি দেবদেবীর বিগ্রহ, যুই ফুল ও পদ্মমালার স্বগন্ধ বাতালে, বিরাটকায় পাষাণ দেউল, কোথাও সংস্কৃত স্তোত্র উচ্চারিত হচ্চে পাণ্ডাদের মুখে—আমাদের সঙ্গী পাগু বলচে এই নীলাচল, এখানে শুধু নীলমাধবের মন্দির তৈরি হয়েচে—বাইরের আনন্দবাজারে নারিকেলের তৈরি নানা রকম মিষ্টান্ন ভোগ ও তাদের সংস্কৃত নাম, প্রাচীন দিনের ভারতবর্ধ যেন এখানে বাধা পড়ে আছে |