পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী تمه 8 পুরা আসে, আমি যাই ভাগলপুরে । বরেন এসেছিল আমার স্থানে । ১৯৩৪ সালে স্বপ্রভা ও র্তার বাবা যখন আসেন, তখনও আমার আসবার সমস্ত ঠিক, স্বপ্রভা চিঠি লিখলে, আমি পুরীর টিকিট পর্য্যস্ত কিনে আনলাম। সমুদ্রমানের জন্যে একটা কোমরবন্ধ পৰ্য্যস্ত কিনলাম কিন্তু আসা হোল না । এতদিন পরে ‘রম ভিলা'তে এসে সেই সব পুরোনো কথাই মনে পড়ছিল। আজ আর কেউ নেই—কোথায় বা সেই সিদ্ধেশ্বরবাবু, কোথায় বা অক্ষয়বাবু। এত সাধ করে ‘রমা ভিলা’র সদর ফটক সেবার ১৯২৩ সালে করানো হোল—ওরা কোথায় চলে গেল ! গেটটি আজও আছে দেখে এলুম। 蔓 লাইব্রেরীতে কালিদাস উৎসব সম্পন্ন হোল। প্রিয়রঞ্জন সেনের দাদা কুমুদ্রবন্ধু সেন বক্তৃতা দিলেন। আমি কিছু বললাম সভাপতি হিসাবে । মনে পড়লো বারাকপুরে গ্রীষ্মের ছুটি অতিবাহিত করবার সময়ে প্রতি বৎসর খুকুর কাছে বলতাম—আজ ১লা আষাঢ়, খুকু এসো, কালিদাসকে স্মরণ করি। এতকাল পরে ভাল করেই স্মরণ করা হোল কালিদাসকে। বিকেলে আবার খুরদারোড থেকে আমাকে নিতে এল—সেখানেও ওবেলা বর্ষা-মঙ্গল’ অনুষ্ঠিত হবে । পুরী থেকে তো কাল চলেই যাবো। খুরদারোড পর্য্যন্ত ফাস্ট ক্লাসে নিয়ে গেল রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়কে, তুষারকাস্তি ঘোষকে এবং আমাকে । জ্যোৎস্নাময়ী রজনী, গুমট বেশ । ডাঃ সরকারের বাংলোর বাইরের মাঠে সবাই মিলে জমিয়ে আডডা দেওয়া হোল। রাধাকুমুদবাবু ও তুষারকাস্তিবাবু ভূতের গল্প আরম্ভ করলেন–রাত সাড়ে দশটায় সভা। আমার প্রথম বক্তৃতা—সবাই খুব হাততালি দিলে। মহাদেব রায়ের বক্তৃত অতি চমৎকার হয়েছিল। পরদিন সকাল আটটার সময় থেকে সারাদিন ট্রেনে। মহানদী ও কাটজুড়ি নদীদ্বয়, দূরের নীল শৈলমালা, কাটজুড়ির বিস্তীর্ণ বালুচর ও তার ধারে স্বধৃত কটক শহরটি বেশ লাগলো। সারাদিন চলেচে ট্রেন, সন্ধ্যার কিছু আগে সুবর্ণরেখা পার হয়ে বাংলাদেশে পড়লাম। অমরদা’ রোড, স্টেশন থেকে কয়েকটি গোরা সৈনিক উঠলো এবং সারারাত গানে-গল্পে তাদের সঙ্গে বেশ কাটানো গেল । ভোরে সাতরাগাছি। টিকিট নিয়ে নিলে এখানে এবং হাওড়া নেমেই সোজা শেয়ালদ হয়ে বারাকপুরে চলে এলুম। এতদিন পরে ইছামতীতে স্নান করে বড় তৃপ্তি হোলো। কোথায় ভুবনেশ্বরের কুচিলা বন, খগুগিরি উদয়গিরির গুহাবলী, পাথার তীর্থ পুরীর নীলাম্বুরাশি–আর কোথায় নলখাগড়া বন্তেবুড়ো গাছের সারি ও ইছামতী নদী। বিকেলে নদীর ধারে নিবারণের পটলের ভুইয়ে বলে রইলুম কতক্ষণ । শাস্ত বর্ষ, গুমিল গাছপালা। বিশ্বরূপের আর এক রূপ এখানে। কুঠার মাঠে সেই জায়গাটায় গেলুম যেখানে খুকুর আমলে একটা বালির টিবি ছিল, খেকশিয়ালীতে গৰ্ত্ত করেছিল—আমি গিয়ে বলতুম ।