পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

šeg বিভূতি-রচনাবলী আনন্দ-নৃত্য দেখে দেখে সারাজীবন কাটিয়ে দিলেও আমার আনন্দ কখনও পানসে হয়ে যাবে না—এই রৌপ্রদীপ্ত প্রভাতের আনন্দ, এই তরুলতার খামল রূপের আনন্দ, নীল আকাশের चनिना । বিষম বর্ষা কমেচে আজি ক'দিন । বিরাম-বিশ্রামহীন বর্ষ, মেঘমেদুর আকাশ । কাল আমরা (কল্যাণী, তিতু ও আমি ) বিকেলে কুঠির মাঠ দিয়ে মরগাঙের খাল পার হয়ে আরামডাঙা বলে ছোট মুসলমানের গ্রামটিতে বেড়াতে গিয়েছিলুম। একটা বাড়ীতে বৌয়ের কল্যাণীকে খুব যত্ন করে পিড়ি পেতে দিলে, পান সেজে দিলে, একটা কাদের ছোট ছেলে এনে ওর কোলে দিয়ে আপ্যায়িত করলে। বেশ লাগলো ওদের সরলতা । মরগাঙের ধারে যখন বসেচি, তখন সবুজের কি বিপুল সমারোহ চারিদিকে ! সামনে আরামডাঙা, ওদিকে বেলেডাঙা যেন সবুজের সমুদ্রে ডুবে আছে। যখন আমাদের ঘাটের কাছাকাছি এসেচি, তখন মেঘের ফাকে আবাটী পূর্ণিমার পূর্ণচন্দ্র একটু'একটু উকি মারচে–মেঘভাঙা সেই জ্যোংঙ্গাতেই আমরা নদীজলে স্নান করতে নামলুম। সন্ধ্যায় ট্রেন যাওয়ার শব্দ পাওয়া গেল। কিন্তু গতকাল রাত্রে জ্যোৎস্নার কি অপূৰ্ব্ব শোভা রাত দশটার পর দেখা দিল সারাদিনের বৃষ্টিয়াত আকাশে । বাইরের রোয়াকে দাড়িয়ে দেখি আনন্দ পাতা, সজনে গাছ, বঁাশঝাড়, বনকাপাসের ভাল—এ সবের ওপর সেই অপূৰ্ব্ব জ্যোৎস্নার কি শোভা—বিশ্বরূপকে একেবারে প্রত্যক্ষ করলুম সামনে । ছেলেবেলা যখন পাচড়া হয়েছিল—তখন এ সময় দেশে ছিলুম, আর কখনো থাকিনি । আজ বড় স্বন্দর শরতের রোদ। নাইবার পূৰ্ব্বে পেয়ারাতলায় গিয়ে বসি কুঠার মাঠে, প্রজাপতি উড়চে ফুলে ফুলে । শুামল বনঝোপ কি সুন্দর চারিদিকে। কে যেন এসে পেছন দিক থেকে চোখ টিপে ধরবে সব সময়েই মনে হয় ৷ উঠে আসতে ইচ্ছে করে না—কি সৌন্দৰ্য্য ! ঘাটে এসে যখন স্নান করতে জলে নামি—তখন নদীর ওপারের নীল শোভা হৃদয় মুগ্ধ করে দিলে। কাল বনগী থেকে জমি কিনে ফিরে আসবার পথে ইন্দু বারিক, আমি ও সন্তোষ খুব ভিজে গেলুম ঝড়-বৃষ্টিতে। পরশু কুটু ধলভূমগড়ে ফিরে গেল। অনেকদিন পরে সে দেশে এসেছিল—দিন চারেক ছিল। একদিন ইন্দুর সঙ্গে বেলেডাঙার ধারের সেই স্বন্দর জায়গাটাতে বেড়াতে গিয়েছিলাম— একদিন মরগাঙে আমাদের কেনা জমিগুলোতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। পরত বিকেলে ইন্দ্র, মধু কামার ও খুড়ো মাছ ধরচে–আমি বেড়াতে বেড়াতে গিয়ে হাজির। আকাশের এই অদ্ভুত রং ও রচনার তলায় দলে দলে মাহবে এই রকম মরগাঙের ধারের মত জাল ফেলচে, ছিপে মাছ ধরচে, যুগল ঘোষের মত গরু চরাচ্চে, তামাক খাচ্চে, পটলের তুই লিডুচ্ছে—এমনি ঝিঙের ক্ষেতে হলুদ ফুল ফুটচে, কত শত বছর থেকে ভরসজোবেলা—এমনি