পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 et.” বিভূতি-রচনাবলী সকালে মেঘ ও ঠাণ্ডা দিন । মোটরে কল্যাণী, আমি ও মিঃ সিন্‌হা চলে গেলুম কেশরদ বঁাশবনে । • এই বিরাট বাশবনের রোপণ ইত্যাদি কাজ বনবিভাগ থেকে করা হয়েচে । কুরুল হক Ranger বল্লে—হুজুর, দু'হাজার কাটালের চারা পোতা হয়েচে । আমর। কেশরদ গ্রামে চলে গেলুম। এই গ্রামটি বাঙালী ও উড়িয়া অধিবাসীদের গ্রাম । কথার মধ্যে অনেক উড়িয়া শব্দ মেশানো । আমাদের মোটর যেতে অনেক লোক এল—বল্পে, এবার খাদ্যের অভাবে বড়ই কষ্ট হয়েচে লোকের । কল্যাণীকে নিয়ে গ্রাম্যদেবী স্বর্ণ বাউড়ীর মন্দির দেখি। বহু পুরোনো মূৰ্ত্তি—নাকমুখ ভাঙ, মন্দিরের আশে পাশে অমন ছোট-বড় কত মূৰ্ত্তি পড়ে আছে। কৃষ্ণ পাণ্ডা বলে ওই মন্দিরের পূজারীর বাড়ী আমরা গিয়ে বসলুম। ওরা কল্যাণীকে নামিয়ে নিয়ে গেল । মাটির ঘর, দেওয়ালে স্বভাষ বস্ব ও গান্ধীর ছবি । একটা লোকের বোধ হয় জর হয়েচে, সে খাটিয়ায় শুয়ে আছে—বল্লে, ম্যালেরিয়া নয়, কারণ ম্যালেরিয়া জর এখানে নেই। কঙ্কালসার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে এল ২৫৩৩টি, এর নাকি ডোমদের ছেলে, সারাদিন ভিক্ষে করে বেড়ায় ; এক এক মুঠে সবাই দেয়। চিন্তামণি পাণ্ড এক ধামা মুড়ি নিয়ে ছেলেদের এক এক মুঠো মুড়ি সবাইকে দিলে, তারপর তারা কাঠ ও গরু চরানো নিয়ে দুঃখ করলে । আমাকে পাগুtঠাকুর বাড়ির মধ্যে নিয়ে গিয়ে চিড়ে, দই ও দুধ খাওয়ালে। একটা ঘরে নিয়ে গেল, বেতের ঝাপি যে কত রয়েচে সারি সারি— vপুরীর দোকানেই সেই বেতের ঝাপির মতো । কোনো ঘরে একটা দরজা জানাল নেই, অন্ধকার সব ঘর। বেলা একটার সময় ওখান থেকে ডাকবাংলো গিয়ে স্নানাহার সেরে নিই। তখনই একটা স্কুলের ছেলে ডাকতে এল, আমরা গেলুম মিটিং এ । হেডমাস্টারের বাড়ীতে চা ও খাবার খেলুম সাহিত্য সভার পরে। গ্ৰীক যুবক হেলিওডোরাসের যেন আবির্ভাব হোল বহু শতাব্দী পরে। সন্ধ্যার সময় কল্যাণীকে নিয়ে মুবর্ণরেখার এপারে বোনালি ঘাটে গিয়ে বসলুম। ওপারে ময়ূরভঞ্জের শৈলমাল, বড় একটা শৈলমালার ওপর প্রকাও একখানা কালে মেঘ ঝুকে পড়ে আছে। এপারে মাঠে নিসিন্দে গাছের বেড়াব ধারে বসে আছি। ভগবানের উপাসনা করলুম সেখানে। কল্যাণী গাইলে, যো দেবাগ্নেী যোহন্স, ইত্যাদি উপনিষদের সেই গম্ভীয় বাণী । জ্যোৎস্না উঠেছে—চতুর্থীর ভাঙা চাদ। কিন্তু থৈ থৈ করচে মুক্ত space বহরাগড়া ডাকবাংলোর সামনে। কত রাত পৰ্যন্ত আমরা জেগে বসে থাকি রোজ রোজ—এমন দূরপ্রসারী space আর কোথায় ? জ্যোৎস্নারাত্রে আমরা বেড়াতে গেলাম সেই সন্ন্যাসীর ভাঙা আশ্রমটির কাছে ! সকালে বহরাগড়া থেকে বেরিয়ে ধলভূমগড়ে হুটুর মেডিক্যাল ক্যাম্পে এলুম। সেখানে ভাত খেয়ে আবার মোটরে বার হই। একটা কুলীর মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েচে ডিনামাইট ফাটাতে গিয়ে। কল্যাণী তাকে দেখে বড় কাতর হয়ে পড়লো। ধলভূমগড়ের ক্যাম্পট