পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१९ বিভূতি-রচনাবলী এমনি জ্যোংমা পড়তো—হে প্রাচীন অরণ্যানী, এই অঞ্চলের যে ইতিহাস তুমি জানে, কেউ তা জানে না। পরদিন সকালে চ পান করে মোটরে বেরুলাম আমি ও মিঃ সিনহা স্বন্দর পাহাড় ও বনের পথে খুব উচু পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। এক জায়গায় বনের মধ্যে O. T, T. কোম্পানী রেলওয়ে স্লিপার চেরাই করচে । আজই সকালে একদল ময়ূর দেখেছিলুম থলকোবাদ বাংলো থেকে। লৌহপ্রস্তর ছড়িয়ে পড়ে আছে বনের মধ্যে, কোনো কোনটি বেশ ভারী, প্রায় ৫০ ভাগ লোহা আছে শতকরা । ওখান থেকে আর এক জায়গায় এসে শৈলচুড়ার ওপারের রাস্ত দিয়ে যাচ্চি—দূরে দূরে আরও পাহাড় দেখতে পেলাম। কিন্তু নেমে দূর পাহাড়ের দৃশ্ব দেখতে গিয়ে আর কিছুই দেখতে পাইনে, বড় বড় গাছে চোখের দৃষ্টি আটকেচে । কমলালেবু খেলুম বসে। একটা পাইথনের খোলস পড়ে আছে পথে, মুড়ে দিলেন কাগজে মিঃ গুপ্ত। তারপর দূর দূর পাহাড়ের দৃষ্ঠ দেখতে দেখতে, পাশের চওড়া বনাবৃত উপত্যকাভূমির দিকে চোখ রেখে নামচি–ওপর থেকে দেখতে পাচ্চি পথ নেমে নেমে চলেচে একেবেঁকে পৰ্ব্বতের গা দিয়ে। হঠাৎ একটি স্বন্দর স্থানে এলুম, বাংকিগাড়া বা ওরেপুরা বলে একটি নদী বয়ে চলেচে সংকীর্ণ উপত্যকা-পথে । ওপরের টিলার বড় বড় শাল গাছের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি কুটির । পথে একটা শালগাছ দেখেছিলুম একশ পয়ত্রিশ বছরের পুরোনো, দশ ফুট বেড় গুড়ির। আমার ঠাকুরদাদা যখন জন্মাননি, প্রপিতামহ ঠাকুর যখন যুবক, তখন এই শাল ছিল ক্ষুদ্র চারা, কি শক্তি ছিল ওর মধ্যে যে এই ক্ষুদ্র ২ ইঞ্চি চারা এই বিশাল বনস্পতিতে পরিণত হয়েচে, এখনও নাকি বাড়চে । ব্ৰহ্মশক্তি রয়েচে বিশ্বের সব তাতে । এই সব না দেখলে শুধু যে ওষধিযু যো বনস্পতিমু আওড়ালে কি হবে । উপলব্ধি করা চাই। ব্ৰহ্মশক্তিকে উপলব্ধি করা চাই। বাবুডেরাতে চা পান করে আমরা রওনা হলুম—বেলা সাড়ে তিনটা । তারপরেই ঘন বনের পথ, নিবিড় ট্রপিক্যাল অরণ্যানী যেন, ডিকেনড্রাম ফুল ফুটে আছে—ফুল নয়, কচি পাতা, দেখতে ফুলের মত। একদিকে ওরেকুরা বয়ে চলেচে সংকীর্ণ উপত্যক-পথে নিবিড বনের মধ্যে দিয়ে। আসাম অঞ্চলের মত অরণ্য । ধনেশ পাখী ডাকচে বনে । একস্থানে মোটরের পথে আবার এই স্বন্দরী পৰ্ব্বতদুহিতা আমাদের পথ রোধ করে দাড়ালো। কুলুকুলু তানে ওর সামুনয় অনুরোধ, আমাকে ভাল করে দেখ। চলে যেও না। এই স্থানটিতে একটি ক্ষুদ্র জলপ্রপাত, নদীর মধ্যেই। স্বনিবিড় বনস্পতিশ্রেণীর ছায়ায় ছায়ায় নদী বয়ে চলেচে, এক পাড়ে দুটি তিনটি কুটির বনের মধ্যে। সাবাই ঘাস বিছানো। তার ওপর বসে ভগবানের সৌন্দৰ্যস্বষ্টি মনে মনে উপভোগ করলুম। চমৎকার স্থান বটে। পেছনের বড় বড় গাছে অপরারের রাঙা রোদ । যেন মুনিঋধিদের আশ্রম, মনে হয় পুরাকালে কোনো উপনিষদের কবি ও দার্শনিক ঋষি এমনই স্বন্দর, নিভৃত, শান্ত বনঝর্ণার তীরের কুটিরে পাৰ্ব্বত্য অরণ্যের ঘন ছায়ার বনকুস্কমের স্বগন্ধ, চঞ্চল উচ্ছ্বাসমী বন্য নদীর নৃত্যছন্দের নূপুৰ্ব্ব-ধ্বনি ও বিহঙ্গের কলতানের মধ্যে বলে সমাহিত মনে উপনিষদ রচনা করেছিলেন, বিশ্বদেবের উপাসনা আপনা-আপনি